শিরোনাম
হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে গেছে, শূন্য থেকে শুরু করেছি : ড. ইউনূস ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৭৩ আসামিসহ এখনও পলাতক ৭০০: কারা মহাপরিদর্শক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী : হাইকোর্টে প্রতিবেদন রাঙ্গামাটির সাজেক থেকে ফিরছেন আটকে পড়া পর্যটকরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ কর্তনে ক্ষোভ,অর্থ ফেরতে আন্দোলনে নামার হুমকি মুন্নী সাহার স্থগিত ব্যাংক হিসাবে মাত্র ১৪ কোটি টাকা শেখ পরিবার ও ৯ গ্রুপের সম্পদের খোঁজে ১০ টিম দেশে বড় সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা, সীমান্তে সতর্ক বিজিবি বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার সতর্কতা জারি, তিন পার্বত্যজেলায় ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করেছে ব্রিটিশ সংস্থা এফসিডিও

বছরে ১ কোটি টন প্লাস্টিকের ব্যবহার, ৭৩ হাজার টন মিশছে সাগরে পলি-প্লাস্টিকে মরণদশা নদীর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে বাংলাদেশের অন্যতম দূষিত নদীতে পরিণত হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী ও সুরমা নদী। বর্তমানে এই নদীগুলোর মরণদশা। অন্যদিকে পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে। এ কারণে সমুদ্রের তলদেশে যে হারে বাড়ছে পলিথিন-প্লাস্টিকের স্তর, তাতে আগামী ৫০ বছর পর সমুদ্রে মাছের চেয়ে পলিথিনের পরিমাণ বেশি হবে।

পলি-প্লাস্টিকে নদীর মরণদশাজাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাদের বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদী দিয়ে প্রতিদিন ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে মিশছে।

এ ছাড়া ভারত, নেপাল ও চীনের বর্জ্য গঙ্গা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের অবাধ ব্যবহার নানা মাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণের কারণে আমাদের বাস্তুতন্ত্র ও ভূমিতে ব্যাপক দূষণ ঘটায় গাছপালা ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়োনিষ্কাশনে ড্রেন, নালা-নর্দমা ভরাট হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন সাগরের তলদেশে জমে জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতি করছে।

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এই অনুপ্রবেশের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস, কিডনিজনিত রোগ ও ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে।
এটি মানবদেহের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পেটের পীড়া, হরমোনের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগের জন্য দায়ী এই প্লাস্টিকসামগ্রী।

অথচ রাজধানীতেই প্রতিদিন ব্যবহার করা হচ্ছে দেড় কোটি পিস পলিথিন। আর পলিথিন উৎপাদনে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার অবৈধ কারখানা রয়েছে। পলিথিনের বাইরে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহারও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে।

বছরে রাজধানীতে গড়ে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ২৪ কেজির বেশি। প্লাস্টিক ও পলিথিনের মাত্রাতিরিক্ত এই ব্যবহারে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী ও সাগর। প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারণে বর্ষাকালে ভেঙে পড়ে দেশের ড্রেনেজব্যবস্থা।

দেশে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কী পরিমাণ বেড়েছে তার বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং বিশ্বব্যাংক। ২০০৫ সালে দেশের শহরাঞ্চলে বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল মাত্র তিন কেজি, যেটি ২০২০ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ কেজিতে উন্নীত হয়েছে।

বর্তমানে শুধু রাজধানীতেই একজন মানুষের বছরে প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়িয়েছে ২৪ কেজি। যদিও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে দেশে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে প্লাস্টিক-পলিথিনের বাজার ছাড়িয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয় বাংলাদেশে।

সারা দেশে কতসংখ্যক অবৈধ পলিথিন কারখানা রয়েছে সে জরিপ করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীসহ সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে প্রায় দেড় হাজার, যার বেশির ভাগ রাজধানীর পুরান ঢাকা ও গাজীপুরকেন্দ্রিক।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ‘বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট নির্ভরতা কমাতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশ আইনের সংশোধনের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক জরিমানার ক্ষমতা দিতে হবে।

তাহলে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে আসবে। আর প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণসংক্রান্ত কার্যকর বিধিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে প্লাস্টিক ও পলিথিনের বিকল্প না থাকায় এর ব্যবহার কমানো যাচ্ছে না। ফলে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটপণ্যের, তন্তুজাতীয় পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক উৎপাদনে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সহজে বহনযোগ্য পরিবেশবান্ধব পাট, তুলা, উল, শণ, বেত, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বাজারে এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্লাস্টিক পণ্যের ওপর কর আরোপ বাড়াতে হবে।’

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারে পরিবেশদূষণের মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এসবের ব্যবহার প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরেই কার্যকর উদ্যোগের অভাব রয়েছে, যার ফলে পরিবেশদূষণ রোধে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭তম। বৈশ্বিক প্লাস্টিক-পলিথিন দূষণের প্রায় আড়াই শতাংশ সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন টন পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার হচ্ছে। যদিও এসব প্লাস্টিক-পলিথিনের মাত্র ৩৭ শতাংশ রিসাইক্লিং করা সম্ভব হচ্ছে।

বর্তমান সরকার যা করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ঘোষণা অনুযায়ী, সারা দেশে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সমন্বিত মনিটরিং টিম। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তর ও সংস্থার কার্যালয়ে ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

গত ৫ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে সব সচিব, সিনিয়র সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই নির্দেশ দেয়। চিঠিতে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গত ২৯ আগস্টের এক চিঠির সূত্র উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত কমিটি।

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এসংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পলিথিন শপিং ব্যাগের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর। এজাতীয় ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে সবাইকে সরকারের নির্দেশনা মানতে হবে, না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধে গত ৩ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ১৬৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ৩৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই সময়ে ৪০ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধেও কাজ চলছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প সরবরাহ এবং নিয়ম বাস্তবায়নে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions