ডায়াবেটিস কী? যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২৭৯ দেখা হয়েছে

স্বাস্থ্য ডেস্ক:- বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের (নিপোর্ট) এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এ রোগে।

আসুন জেনে নেই ডায়াবেটিস কী ও কেন হয়?

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এ চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে।

শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।

ডায়াবেটিসের ধরন-

ডায়াবেটিস ৪ ধরনের হয়ে থাকে- টাইপ-১, টাইপ-২, জেস্টেশনাল ও অন্যান্য। টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের শরীরের সব ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায়। তাদের যদি আলাদা করে ইনসুলিন দেওয়া না হয়, তাহলে তারা মারা যেতে পারেন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ১০ শতাংশ এই টাইপ ওয়ানে আক্রান্ত।

অন্যদিকে যাদের শরীরে ইনসুলিন আছে, কিন্তু সেটা কাজ করতে পারছে না। তখন আমরা যে খাবারই খাই, সেটা গ্লুকোজ হিসেবে শরীরে জমে যায়। এটেই হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

যে কোনো ব্যক্তিই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এ জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি ও অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে।

যাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি-

সাধারণত মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিরা টাইপ ২ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বয়স কম হওয়া সত্ত্বেও যাদের ওজন বেশি ও যাদেরকে বেশিরভাগ সময় বসে বসে কাজ করতে হয়, তাদেরও এ ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। বিশেষ কিছু এলাকার লোকেরাও এই ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছে। তার মধ্যে আছে দক্ষিণ এশিয়া।

গর্ভবতী নারীও ডায়াবেটিসে হতে পারে। তাদের দেহ থেকে যখন নিজের ও সন্তানের জন্যে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না, তখনই তাদের ডায়াবেটিস হয়।

যারা অত্যধিক জাঙ্কফুড খান, তাদের শরীরে ক্যালোরি ও ফ্যাট পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরে ইনসুলিনে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়। জিনগত রোগের কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আবার অতিরিক্ত ওজনের কারণেও ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। এ কারণে শারীরিক ক্রিয়াকলাপ দৈনিক করতে হবে। আবার বেশি মানসিক চাপে থাকা, ধূমপান করা, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ভুল ওষুধ সেবন, চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস ও মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণের ফলেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ডায়াবেটিস লক্ষণ-

ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
দুর্বল দৃষ্টিশক্তি
ক্লান্ত ও দুর্বল বোধ করা
ঘন মূত্রত্যাগ
ত্বকের সংক্রমণ
চামড়া ফেটে যাওয়া
শুষ্ক ত্বক
শরীরের ওজন কমে যাওয়া
ঘন ঘন তৃষ্ণা

চিকিৎসা-

চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় রোগীকে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক ডায়েট ও ব্যায়াম বা যোগের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করার পরামর্শ দেন। ডায়াবেটিস সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে, চিকিৎসকরা প্রথমে রোগীর চিনির স্তর পরীক্ষা করেন।

এ ব্লাড সুগার টেস্ট দুটি উপায়ে করা হয়- প্রথমত, রক্তে চিনির পরীক্ষা খালি পেটে ও দ্বিতীয়ত, রক্তে শর্করার পরীক্ষা খাওয়ার পরে করা হয়। এরপর রোগীর অবস্থায় বুঝে তবেই চিকিৎসকরা তাকে ওষুধ দেন। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পড়তেই রোগীর উচিত তার চোখের রেটিনা, ছানি ইত্যাদি পরীক্ষা করানো।

ডায়াবেটিস রোগীকে যেসব সাবধানতা মানতে হবে-

ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনিক ব্যায়াম ও যোগব্যায়ামের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করা উচিত। যোগব্যায়ামে আনুলোম, বিলোম, কপালভারতীর মতো আসন করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ধূমপান পরিহার করাও জরুরি। নজর রাখতে হবে কোলস্টেরলের মাত্রার ওপর। এর মাত্রা বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করা দরকার। তার মধ্যে দ্রুত হাঁটা ও সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা অন্যতম।

ডায়াবেটিস রোগীদের সর্বদা তাদের পায়ে আঘাত এড়ানো উচিত।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

অতিরিক্ত তেল ও মসলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন ও প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খান।

প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে হোয়াইট পাস্তা, প্যাস্ট্রি, ফিজি ড্রিংকস, চিনি জাতীয় পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি।

শাক-সবজি, ফল, বিনস ও মোটা দানার খাদ্য শস্য বেশি খেতে হবে।

স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন ও ম্যাকেরেল।

এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমাণে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।

অতিরিক্ত ওজনে ভুগলে ওজন কমাতে হবে। যদি ওজন কমাতেই হয় তাহলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions