রাঙ্গামাটি:- প্রতি বছরের মতো এ বছরও পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে বাংলা নববর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বেশ কিছুটা আগে থেকেই। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত নানা জাতিগোষ্ঠী মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব। যার কারণে নববর্ষের ১০-১২ দিন আগে থেকেই শুরু হয় বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা, তার রেশ থেকে যায় নতুন বছর শুরুর পর আরও অন্তত ১০-১২ দিন। জাতিগোষ্ঠী ভেদে বর্ষবরণের এসব অনুষ্ঠান পরিচয় পায় বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু নামে।
এই সময়টাতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পাশাপাশি বাসবাসরত জাতিগোষ্ঠীগুলোর নানা সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে শোভাযাত্রা, নানা ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নদীতে ফুল ভাসানো, বন থেকে কুড়িয়ে এনে ফুল দিয়ে ঘর সাজানো, বাহারি তরকারি দিয়ে পাজন রান্না ও পানি উৎসব অন্যতম।
জেলায় প্রতি বছর এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজনের সূচনা করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু ও বিহু উপলক্ষে বুধবার (৩ এপ্রিল) থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চার দিনব্যাপী মেলা ও উৎসবের আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিকেলে এইসব আয়োজনের সূচনা উপলক্ষে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বের হয় শোভাযাত্রা যা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, খিয়াং, লুসাইসহ পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের পোশাক পরে অংশ নেন। শুধু পোশাক নই শোভাযাত্রায় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সুর মুখরিত করে চারদিক।
শোভাযাত্রা শেষে ক্ষুদৃ নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ফিতা কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি। এইসময় নানা জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ি নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়।
পরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, এতে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
সভায় তিনি বলেন, পৃথিবীর যে সকল দেশের সাথে আমাদের সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তি হয়েছে, সেসব দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিগোষ্ঠিগুলোর সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। আমরা সব সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সংস্কৃতি চর্চায় সহযোগীতা করবো এবং পাশে আছি। বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান পাহাড়ি বাঙ্গালি সকলের ঐক্যের প্রতীক। সভায় আরও অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন এর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য রেমলিয়ানা পাংখোয়া।
চার দিনের এই বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু বিহু মেলায় আয়োজন রয়েছে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, অলংকার, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র ও এতিহ্যবাহী খাবারের। মেলায় স্থান পেয়েছে প্রায় শতাধিক স্টল। মেলায় ঐতিহ্যবাহী ভাষা ও বর্ণমালা বিষয়ক প্রতিযোগীতা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা জাতিগোষ্ঠীর ঘিলা খেলা, শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা নাটক মঞ্চায়ন, পাজন রান্না প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র সংগীত পরিবেশনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন রয়েছে। এ মেলা শেষ হবে ৬ এপ্রিল। এরপর থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বর্ষবরণের আয়োজন শুরু করবে।