ডেস্ক রির্পোট:- নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো এখনো কাটেনি। এখনো শরীফা গল্পের পরিষ্কার কিছু জানায়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আবার যে বইয়ের বানান ও ভুলত্রুটি সংশোধনের কথা, তারও কিছু হয়নি। এনসিটিবি সূত্র বলছে, সংশোধনের কাজ শেষ করতে এ মাস লেগে যাবে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। এদিকে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবইয়ে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু শিক্ষাবর্ষ শুরুর পরই পাঠ্যপুস্তকের ভুল ও অসংগতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। এই বিতর্কের মুখে নতুন করে উত্তাপ বাড়ায় ‘শরীফার গল্প’। সবমিলিয়ে বইয়ে বাক্য, বানান, ভুলত্রুটিসহ নানা বিষয়ে বিতর্কের ঘটনা প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব বিষয়ে সংশোধনী দেয়নি এনটিসিবি।
সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের গল্প নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিষয়টি বেশি আলোচনায় আসে ১৯ জানুয়ারি। ওইদিন এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস জাতীয় শিক্ষক ফোরামের অনুষ্ঠানে বই থেকে ওই গল্পের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন এবং অন্যদেরও ছেঁড়ার আহ্বান জানান। মুহূর্তেই ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে পরিমার্জনের লক্ষ্যে ২৪ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও এ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারেননি কমিটির সদস্যরা।
কমিটির আহ্বায়ক ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। শিগগিরই জমা দিয়ে দেব। তবে এখন রমজান মাস, তাই ঈদের আগে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া একটু কষ্টকর হয়ে যাবে। যেহেতু পাঠ্যবইয়ে এই তদন্ত প্রতিবেদনের সংশোধনী যাবে, তাই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আমরা যথেষ্ট পড়াশোনা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করছি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বইয়ের ভুলত্রুটির সংশোধনী আমরা দ্রুত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেব। তবে ঈদের আগে সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিশেষজ্ঞ গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। শরীফার গল্পে যে সংশোধনী আসবে আর পাঠ্যবইয়ের জরুরি যে সংশোধনীগুলো রয়েছে, সেগুলো এপ্রিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষকরা বলছেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইটি সাজানো হয়েছে ১০টি অধ্যায়ে। এর তৃতীয় অধ্যায়ে মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা অংশে রয়েছে শরীফার গল্প। এরই মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষের তিন মাসের ক্লাস শেষ। সেই হিসাবে আগামী মাসে এ অধ্যায়টি পড়ানোর কথা। তারা বলছেন, যদি যথাসময়ে সংশোধনী না আসে তবে এ অধ্যায়টি বাদ দিয়ে পরের অধ্যায়ে চলে যাবেন নাকি দুই অধ্যায় পড়িয়ে সংশোধনীর জন্য অপেক্ষায় থাকবেন, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন। গল্পটি সংশোধন করা হলে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তা দিলে ভালো হবে। তা না হলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে।
গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। একইভাবে ২০২৫ সালে চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে তা বাস্তবায়ন হবে। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।
এনসিটিবির সূত্র বলছে, সংশোধনীর পরিমাণ বেশি হলে অংশবিশেষ (ডিউ পার্ট) ছাপিয়ে দেওয়া হবে। আর সংশোধনীর পরিমাণ কম হলে ওয়েবসাইটে সংশোধনী দেওয়া হবে। একই সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তা বিদ্যালয়গুলোয় পড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিন মাসেও সংশোধনী দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটবে কি না জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, আমরা চলতি মাসের শেষের দিকে বইয়ের সংশোধনী পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল ছুটিতে থাকায় ঈদের পর এই সংশোধনী পাঠানো হবে। সাধারণত যেসব অধ্যায় সংশোধন হচ্ছে, সেগুলো পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এখনো পড়ানোর সময় হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে স্কুল খোলার আগে বইয়ের সংশোধনী নিয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে না পেলে আমরা আর অপেক্ষা করব না। আমরা আমাদের জরুরি সংশোধনীগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেব। পরে মন্ত্রণালয়ের সংশোধনী পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নানা সমালোচনার চাপে চলতি মাসের শুরুতে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল সরকার। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী তারা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে প্রতিটি মিডটার্ম ও চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে পাঁচ ঘণ্টার। এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলবে। এতে ছয়টি সেশন থাকবে। চার ঘণ্টা থাকবে ব্যাবহারিক। আগের পদ্ধতিতে আর পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষাকে এখানে ‘মূল্যায়ন’ বলা হবে। এছাড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে, বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডের অধীনে দুটি পরীক্ষা হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এখন থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িকের মতো কোনো পরীক্ষা হবে না। তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন চলবে। এ মূল্যায়ন হবে সারা বছর চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে।যুগান্তর