ডেস্ক রির্পোট:- রাজবাড়ীতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদা দাবি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মো. নাজমুল হাসান মিন্টু (২৪) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সোয়া ১০টার দিকে শহরের খলিফাপট্টি এলাকা থেকে নাজমুল গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ সময় তার কাছ থেকে সময় টেলিভিশনের ভুয়া পরিচয়পত্র ও ভিজিটিং কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার নাজমুল রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের রসূলপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে। ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দানকারী নাজমুল প্রাথমিকের গণ্ডিও পার করতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রাজবাড়ী সদর থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, নাজমুল হাসান মিন্টু পঞ্চম শ্রেণিতে উঠে আর পড়ালেখা করেননি। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের রাজবাড়ী প্রতিনিধি আশিকুর রহমানের নামে পরিচয়পত্র বানিয়ে নিজের বলে চালাতেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে গ্রামের নারীদের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের গাবলা গ্রামের কয়েকজন নারীকে ভালো বেতনে পত্রিকা অফিসে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন নাজমুল। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর বেবী বেগম নামে এক ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কালুখালী উপজেলার সোনাপুর মোড়ে বিসমিল্লাহ্ খাবার হোটেলে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৫ প্যাকেট বিরিয়ানি হাতিয়ে নেয় নাজমুল। এ ঘটনায় ১০ ফেব্রুয়ারি কালুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দোকানমালিক ইউনুস।
এসপি আরও বলেন, গত ১০ জানুয়ারি নিজেকে সময় টেলিভিশনের রাজবাড়ী প্রতিনিধি আশিকুর রহমান পরিচয় দিয়ে এক মাসের জন্য চার হাজার টাকা চুক্তিতে রাজবাড়ী শহরের খলিফাপট্টিতে হোটেল সমবায় আবাসিকে একটি রুম ভাড়া নেয় নাজমুল। ১৫ দিন তিনি ওই হোটেলে অবস্থান করেন। ২৬ জানুয়ারি সকালে তিনি হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় ম্যানেজার জগদীশ চন্দ্র দাস ভাড়া চাইলে নাজমুল অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ওই হোটেলে অবৈধ এবং ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চলে বলে হুমকি দিয়ে ম্যানেজারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দিলে তিনি পত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করে আবাসিক হোটেলের ব্যবসায়ী মানসম্মান ক্ষুণ্ন করবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যান।
হোটেলের ম্যানেজার নাজমুলের দেওয়া ভিজিটিং কার্ড নিয়ে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নাজমুল রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সদস্য নন এবং সময় টেলিভিশনের সাংবাদিকও নন। পরে ম্যানেজার বাদী হয়ে ১৩ মার্চ নাজমুলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করলে ওইদিন রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে সময় টেলিভিশনের রাজবাড়ী প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বলেন, আমার নাম পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও প্রতারণা করার ঘটনা জানতে পেরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমি রাজবাড়ী সদর থানায় জিডি করি। পরে ভুক্তভোগী হোটেল ম্যানেজার জগদীশ চন্দ্র প্রতারক নাজমুলের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
প্রতারক থেকে সকলকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান এই সাংবাদিক।