ডেস্ক রির্পোট:- গ্রামীণ ফোনের একটি গ্রুপ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অতর্কিত হানা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ দখল করেছে। তাঁরা গ্রামীণ টেলিকম ভবনে অবস্থিত গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শক্তি ও গ্রামীণ কল্যাণসহ অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানগুলোর দখল নেওয়ার পরেই গ্রামীণ ব্যাংক কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এতে গত সোমবার থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে উত্তেজনা ও ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সহযোগিতা চেয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা।
গ্রামীণ টেলিকম ভবনটি রাজধানীর মিরপুর–১ নম্বর সেকশনের চিড়িয়াখানার রোডের ৫৩ / ১ নম্বর ঠিকানায় অবস্থিত। গতকাল বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে তাঁরা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও ব্যক্তির অনুমোদন নিতে বলেন। সেই চাহিদা পূরণ করতে না পারায় ভবনের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি।
তবে আশপাশের লোকজনের কাছে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তাঁরা জানান, গত সোমবার বিকেলে গ্রামীণ ব্যাংকের ২০–২২ জন লোক জোর করে ভেতরে প্রবেশ করেন। এতে নেতৃত্ব দেন গ্রামীণ ব্যাংকের উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় প্রধান ফয়জুল হক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন এসেছেন। তাঁরা মিলেমিশে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এভাবে কাজ করা অস্বস্তিকর।’
গ্রামীণ টেলিকমের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রামীণ ব্যাংকের অন্তত ২০ জনের একটি দল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে খুঁজতে থাকেন। ওই দুই কর্মকর্তা নিচে গেলে তাঁদের বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের বৈঠক চলছে। সেখান থেকে একটি চিঠি আসবে। সেই চিঠি আসার আগে পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
মামলা করতে চাইলে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিতে হবেমামলা করতে চাইলে ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানকে ৫৪ কোটি টাকা জমা দিতে হবে
তিনি বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো চিঠি না পেয়ে ভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা। তাঁরা মূলত গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ মৎস্য ও পশু সম্পদ ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ সামগ্রী, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ শক্তি ও গ্রামীণ কমিউনিকেশন দখলের চেষ্টা করেন। তবে দখলের লক্ষ্যবস্তু ছিল গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ কল্যাণ ও গ্রামীণ শক্তি। এসবের মধ্যে গ্রামীণ কল্যাণ শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মইন চৌধুরী গ্রামীণ টেলিকম ভবনে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে শাহ আলী থানায় একটি জিডি করেছেন। নিয়ন্ত্রণ দখল করা কয়েকজন জানিয়েছেন, কোম্পানির চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়েছে। এতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে গ্রামীণ ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. গোলাম জাকারিয়া রহমানকে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘গ্রামীণ টেলিকমের আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের ৩৫ (৩) ধারা মোতাবেক গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনামণ্ডলীর ১৫৫ তম সভার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আপনাকে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক হিসেবে মনোনীত করা হলো।’
এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।