ডেস্ক রির্পোট:- শীতে কাঁপছে দেশ। কনকনে বাতাসে কাবু সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে জুবুথবু হয়ে আছে পুরো জনপদ। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ সেলসিয়াস, যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে আজ দেশের ১৩ এলাকার তাপমাত্রা নেমে গেছে ১১ ডিগ্রির নিচে। রাজধানী ঢাকায়ও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শীতের তীব্রতা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসলে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। এখন যেমন ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ১৮.৫, আর সর্বনিম্ন ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অর্থাৎ বাড়া ও কমার ব্যবধান মাত্র ৫ ডিগ্রি। এ কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তাহলেই শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। আর যদি পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তখন শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এখন ঢাকার অবস্থা সেরকমই।’
আবহাওয়া অফিস জানায়, একইভাবে প্রায় বেশিরভাগ জেলায় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি আকাশে মেঘ না থাকায় উত্তরের হিমেল বাতাস সহজে নিচে নেমে আসাও একটি কারণ। এর আগে ডিসেম্বর মাসে শীত যখন অনুভূত হচ্ছিল না, তখন আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছিলেন, আকাশে মেঘ থাকলে ঠান্ডা বাতাস নিচে নামতে পারে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮, যা শুক্রবার (১২ জানয়ারি) ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে এবং চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকায় আজ তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ৭, যা শুক্রবার ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ১১ ডিগ্রির নিচে থাকা অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজশাহীর বদলগাছিতে ৮ দশমিক ৯, সৈয়দপুরে ৯, তেতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩, চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫, রাজশাহী ৯.৬, ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭, কুমারখালিতে ১০, রংপুরের ডিমলায় ১০ দশমিক ১, রংপুরে ১০ দশমিক ৩, বরিশালে ১০ দশমিক ৭, যশোর ও রাজারহাটে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও রবিবার দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে বলেন, ‘রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলেন, সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
তিনি জানান, সাধারণত তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আর ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে সেই পরিস্থিতিকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ট্রিবিউন