ডেস্ক রির্পোট:- শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পরপর গঠিত চারটি সরকারে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার দিক থেকে বরাবরের মতো এগিয়ে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলা। বর্তমান সরকারসহ গত চারটি সরকারেই এই তিন জেলা থেকে একাধিক ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। টেকনোক্র্যাট কোটা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ৩৭ জন সদস্য এসেছেন দেশের ২৫টি জেলা থেকে। ফলে ৩৯টি জেলার কোনও প্রতিনিধিত্ব এবারের মন্ত্রিসভায় নেই। বর্তমানসহ চারটি সরকারেই দেশের ৯টি জেলার কোনও প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভায় নেই। এদিকে গত তিনটি মেয়াদে মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার বঞ্চিত হয়েছে লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ ও যশোর জেলা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দায়িত্ব নেওয়া নতুন মন্ত্রিসভাসহ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ৪টি মন্ত্রিসভায় ও এ সময়ে একাধিক দফায় সংযুক্তি ও রদবদলের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার মন্ত্রিসভায় ঢাকা জেলা থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে তিনজন করে এবং দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম জেলা থেকে দুইজন করে ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। অন্য ১৯টি জেলা থেকে এবার একজন করে মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
বর্তমান মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীসহ গোপালগঞ্জ জেলা থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন দুইজন। অন্যজন হলেন— বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহম্মদ ফারুক খান। এর আগে বিগত মেয়াদে টেকনোক্র্যাট কোটার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মন্ত্রিসভায় ছিলেন। মোহাম্মদ ফারুক খান প্রথম মেয়াদে (২০০৯-১৪) প্রথমে বাণিজ্য এবং পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
ঢাকা জেলা থেকে এবারের মন্ত্রিসভায় আছেন ৫ জন। তারা হলেন— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পরিবেশ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বিদায়ী মেয়াদে এ জেলা থেকে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালে গঠিত সরকারে এ জেলা থেকে আসাদুজ্জামান খান কামাল, নসরুল হামিদ ছাড়াও রাশেদ খান মেনন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ছিলেন মন্ত্রিসভায়। আর ২০০৯ সালের প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিসভায় ছিলেন সাহারা খাতুন, কামরুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
গাজীপুর জেলা থেকে এবার মন্ত্রিসভায় তিন জন স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন— মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম রুমানা আলী। বিদায়ী মেয়াদে এই জেলা থেকে আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মন্ত্রিসভায় ছিলেন। ২০১৪ সালের সরকারে ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। ২০০৯ সালে গঠিত সরকারের প্রথম মেয়াদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেও পরে তিনি পদত্যাগ করেন। ওই সরকারের শেষের দিকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার নির্বাচিত হওয়ায় তার স্থলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি।
চট্টগ্রাম জেলা থেকে প্রতিবারই একাধিক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে মন্ত্রিসভায়। এবার আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিদায়ী মেয়াদেও এই দুইজনের পাশাপাশি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, টেকনোক্র্যাট কোটায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া ইয়াফেস ওসমানের জেলাও চট্টগ্রাম। তিনি বর্তমান সরকারের টানা চার মেয়াদেই মন্ত্রিসভায় আছেন। এছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে এই জেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (জাপা), নুরুল ইসলাম বিএসসি (টেকনোক্র্যাট) এবং প্রথম মেয়াদে আফসারুল আমিন, ড. হাছান মাহমুদ, দিলীপ বড়ুয়া (টেকনোক্র্যাট) ছিলেন মন্ত্রিসভায়।
বিগত মেয়াদগুলোতে একাধিক থাকলেও এবার সিলেট জেলা থেকে মন্ত্রিসভায় আছেন দুইজন। এ জেলা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়া ডা. সামন্ত লাল সেনের বাড়ি এ জেলায়। বিদায়ী সিলেট জেলা থেকে মন্ত্রিসভায় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ (পরে মন্ত্রী)। এ জেলা থেকে ২০১৪ সালে গঠিত মন্ত্রিসভায় আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও নুরুল ইসলাম নাহিদ ছিলেন। সরকারের প্রথম মেয়াদেও (২০০৯) এই দুইজনই সরকারের মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
দিনাজপুর থেকে চারটি মেয়াদেই মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব রয়েছেন। বর্তমান মেয়াদে এ জেলা থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও নৌ পরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সরকারে যুক্ত হয়েছেন। বিদায়ী মেয়াদেও খালিদ মাহমুদ একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া এবার ছাড়াও এ এইচ মাহমুদ আলী প্রথম দুই মেয়াদেই (২০০৯ ও ২০১৪) এবং মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রথম দুই মেয়াদে মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
রংপুর জেলা থেকে এবার মন্ত্রিসভায় কেউ স্থান পাননি। তবে বিদায়ী মেয়াদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বাড়ি এ জেলায়। এ জেলা থেকে দ্বিতীয় (২০১৪) মেয়াদে এই জেলার মশিউর রহমান রাঙ্গা (জাপা) মন্ত্রিসভায় থাকলেও প্রথম মেয়াদে (২০০৯) কেউ ছিলেন না। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম দুইটি মেয়াদে এই জেলার একটি আসন (পীরগঞ্জ) থেকে নির্বাচিত হলেও পরে তিনি তা ছেড়ে দেন।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় নোয়াখালী জেলার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আগের তিন টার্মেও সরকারের সঙ্গে ছিলেন। তবে, প্রথম টার্মের মাঝামাঝি সময় তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
টাঙ্গাইল জেলা থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল হক (টিটু) এবারের মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। সরকারে বিদায়ী (২০১৯) ও প্রথম (২০০৯) মেয়াদে ড. আব্দুর রাজ্জাক (খাদ্য মন্ত্রণালয়) ছিলেন মন্ত্রিসভায়। এছাড়া প্রথম মেয়াদে (২০০৯) সালে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন সরকারের মন্ত্রিভায়। তিনি দ্বিতীয় (২০১৪) মেয়াদেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। তবে হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া তৃতীয় মেয়াদের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের বাড়িও টাঙ্গাইল জেলায়।
নতুন সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আইনমন্ত্রী নতুন মেয়াদ ছাড়াও আগের দুটি মেয়াদেও একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া এ জেলার থেকে মরহুম ছায়েদুল হকও ২০১৪ মেয়াদে মন্ত্রিসভায় ছিলেন। আর ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম ছিলেন প্রথম মেয়াদে।
এবারের সরকারে কুমিল্লা জেলা থেকে গতবারের ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। তিনি ছাড়াও বিদায়ী মেয়াদের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লায়। এর আগের মেয়াদেও এ জেলার (২০১৪) মোস্তফা কামাল ছাড়াও মজিবুল হক ছিলেন মন্ত্রিসভায়। আর প্রথম মেয়াদের মাঝামাঝিতে যুক্ত হয়েছিলেন মজিবুল হক। প্রথম মেয়াদে টেকনোক্র্যাট কোটায় আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের স্থায়ী ঠিকানাও এই জেলায়।
চাঁদপুরের ড. দীপু মনি এবার পেয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বিদায়ী মেয়াদে তিনি পালন করেছেন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রিসভায় না থাকতে পারলেও প্রথম মেয়াদে দীপু মনি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এছাড়া এ জেলার মহিউদ্দিন খান আলমগীর প্রথম মেয়াদের মাঝামাঝি সময় মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছিলেন। আর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ছিলেন দ্বিতীয় (২০১৪) মেয়াদের মন্ত্রিসভায়।
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে এবারের মন্ত্রী সভায় কারও স্থান হয়নি। তবে গত দুইটি মেয়াদে এ জেলার এমপি এম এ মান্নান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এছাড়া এ জেলা থেকে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম মেয়াদের মাঝামাঝিতে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছিলেন।
গত মেয়াদের ধারাবাহিকতায় নরসিংদী জেলার নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবারও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। এ জেলা থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও প্রথম মেয়াদে রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
মানিকগঞ্জ জেলা থেকে সদ্য বিদায়ীসহ বিগত দুই মেয়াদেই জাহিদ মালেক মন্ত্রিসভায় থাকলেও এবার এ জেলার কেউ মন্ত্রী সভায় নেই।
গত মেয়াদের মতো এবারও নওগাঁ থেকে মন্ত্রিসভায় রয়েছেন সাধন চন্দ্র সরকার। এই জেলা থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে ছিলেন ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক।
লালমনিরহাটের নুরুজ্জামান আহমেদ গত দুই মেয়াদে থাকলেও এবার এ জেলার কেউ নেই মন্ত্রিসভায়। এছাড়া প্রথম মেয়াদে এ জেলার মোতাহার হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
পিরোজপুর জেলা থেকে এবার মন্ত্রিসভায় কেউ নেই। এ জেলা থেকে বিদায়ী মেয়াদে শ ম রেজাউল করিম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ও বিগত মেয়াদে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (জেপি) ছিলেন মন্ত্রী সভায়।
মৌলভীবাজার থেকে এবার কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। বিদায়ী মেয়াদে শাহাব উদ্দিন (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়) মন্ত্রী সভায় ছিলেন। এ জেলার মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন ২০১৪ মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা চার মেয়াদের মধ্যে এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রী পেলো খাগড়াছড়ি জেলা। এ জেলার কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
বান্দরবান জেলার বীর বাহাদুর উ শৈই সিং বিগত দুই মেয়াদে ও রাঙ্গামাটি জেলার দীপঙ্কর তালুকদার ছিলেন প্রথম (২০০৯) মেয়াদের মন্ত্রিসভায়।
নেত্রকোনা জেলা থেকে বিদায়ী টার্মে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার (টেকনোক্র্যাট) ও আশরাফ আলী খান খসরু মন্ত্রিসভায় ছিলেন। এ জেলা থেকে বিগত মেয়াদে মোস্তফা জব্বার ছাড়াও আরিফ খান জয় ছিলেন মন্ত্রিসভায়। তবে এবার এ জেলা কোনও মন্ত্রী পায়নি।
খুলনা থেকে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এবার রয়েছেন সরকারের মন্ত্রিসভায়। বিদায়ী (২০১৯) ও প্রথম (২০০৯) টার্মে ছিলেন মন্নুজান সুফিয়ান। এছাড়া এবারের মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ২০১৪ মেয়াদে এ জেলার থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
নাটোরের জুনাইদ আহমেদ পলক টানা তিনটার্ম মন্ত্রিসভায় রয়েছেন। প্রথম (২০০৯) মেয়াদে এই জেলার আহাদ আলী সরকার ছিলেন সরকারের মন্ত্রিসভায়।
গত তিনটি টার্মেই মন্ত্রিসভায় যশোর জেলার প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এবার এ জেলা বঞ্চিত হয়েছে। এ জেলা থেকে প্রথম মেয়াদে মোস্তফা ফারুক মোহম্মদ, দ্বিতীয় (২০১৪) মেয়াদে ইসমাত আরা সাদেক এবং বিদায়ী টার্মে ছিলেন স্বপন ভট্টাচার্য।
জামালপুর থেকে এবার মন্ত্রী সভায় আছেন ফরিদুল হক খান। বিদায়ী টার্মেও ফরিদুল হক খান ও ড. মুরাদ হোসেন ছিলেন মন্ত্রিসভায়। পরে অবশ্য ডা. মুরাদ বাদ পড়েন। এছাড়া দ্বিতীয় মেয়াদে মির্জা আজম আর প্রথম মেয়াদে ছিলেন আবুল কালাম আজাদ ও রেজাউল করিম হীরা ছিলেন মন্ত্রিসভায়।
ময়মনসিংহ থেকে এবার মন্ত্রিসভায় আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম। গতবার ছিলেন দুইজন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী (পরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত) শরীফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ জেলা থেকে ২০১৪ মেয়াদে মরহুম প্রমোদ মানকিন ও ২০০৯ মেয়াদে মজিবুর রহমান ফকির মন্ত্রী সভায় ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে এবার মন্ত্রী হয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন (যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী)। এ জেলা থেকে প্রথম (২০০৯) ও (২০১৪) দ্বিতীয় টার্মে মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রী ছিলেন।
হবিগঞ্জ জেলার মাহবুব আলী গতবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও এ জেলায় এবার কোনও মন্ত্রী নেই। ২০১৪ মেয়াদে এই জেলার কেউ মন্ত্রিসভায় না থাকলেও ২০০৯ মেয়াদে ছিলেন মরহুম এনামুল হক মোস্তফা শহীদ।
রাজশাহী জেলার কেউ একার মন্ত্রী সভায় স্থান পাননি। এ জেলা থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিগত দুই টার্মে দায়িত্ব পালন করলেও এবার তার মন্ত্রিসভায় স্থান হয়নি। এছাড়া প্রথম মেয়াদে এ জেলার ওমর ফারুক চৌধুরী ছিলেন মন্ত্রিসভায়।
বরিশাল জেলা থেকে গতবার ও এবার জাহিদ ফারুক ও মেহেরপুর জেলা থেকে ফরহাদ হোসেন মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন।
ফরিদপুর জেলা থেকে এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান। এছাড়া জেলা থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
রাজবাড়ী জেলা থেকে এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন জিল্লুল হাকিম (রেলমন্ত্রী)। এর আগে সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের (২০১৪) শেষ দিকে ২০১৮ সালে এ জেলার কাজী কেরামত আলী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
পটুয়াখালী জেলা থেকে এবার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় এসেছেন মুহিববুর রহমান (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়)। এ জেলা থেকে বিগত দুটি টার্মে কোনও মন্ত্রী না থাকলেও প্রথম টার্মে (২০০৯) পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাহবুবুর রহমান তালুকদার।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা এই চার মেয়াদে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, বরগুনা, মুন্সীগঞ্জ, ফেনী, কক্সবাজার জেলার কোনও প্রতিনিধি মন্ত্রিসভায় স্থান পায়নি।
এদিকে শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ ও পাবনা প্রথম (২০০৯) মেয়াদে, সাতক্ষীরা ও রাঙ্গামাটি দ্বিতীয় (২০১৪) মেয়াদে, ভোলা, বরিশাল, নীলফামারী, লক্ষ্মীপুর, ঠাকুরগাঁও ও মাগুরা এবং তৃতীয় মেয়াদে (২০১৯), পঞ্চগড়, নারায়ণগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, বাগেরহাট ও শরীয়তপুরের প্রতিনিধিত্ব ছিল মন্ত্রিসভায়।
চারটি সরকারের মন্ত্রিসভায় জেলার প্রতিনিধিত্ব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি সরকারেই ১৫টি জেলার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এগুলো হলো— গোপালগঞ্জ, সিলেট, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ঢাকা, জামালপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর, নাটোর, নোয়াখালী ও কুমিল্লা। এদিকে গত তিনটার্ম টানা মন্ত্রী পেলেও এবার বঞ্চিত হয়েছে লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ ও যশোর জেলা।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনাসহ এই মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন ৩৭ জন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী, ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী দুই মেয়াদে প্রায় দেড়শতাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় ২৩ জন মন্ত্রীসহ ৩১ জন সদস্য মন্ত্রিসভায় স্থান পান। পরে একাধিক দফায় সম্প্রসারণ ও রদবদলে মন্ত্রিসভার সদস্য অর্ধশতকের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় দফায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে আবারও বিজয়ী হয়ে ওই বছরের ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের সময় ৪৪ জন সদস্য নিয়ে মন্ত্রিসভা শুরু হলেও কয়েক দফায় সম্প্রসারণ ও রদবদল মিলিয়ে ৫৭ জন দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় মেয়াদে ২০১৯ সালে ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিন জন উপমন্ত্রীসহ ৪৭ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে সরকার। বিভিন্ন সময়ে আরও তিনজন মন্ত্রিসভায় যুক্ত হন। ট্রিবিউন