ডেস্ক রির্পোট:- একটি নির্বাচনি এলাকায় যত ভোট পড়ে তার শতকরা সাড়ে ১২ শতাংশ কোনো প্রার্থী না পেলে প্রার্থিতার সঙ্গে জমা দেয়া জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তবে এখন পর্যন্ত কমিশনে মোট কত টাকা জমা পড়েছে, সেটির হিসাব এক জায়গায় করা নেই।
১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ (ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর) আসনে গণফোরাম থেকে ভোটে লড়ে জামানত হারান ড. কামাল হোসেন। রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হলেও এরপর থেকে আর ভোটে দাঁড়াননি তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি আসনেই এই ধরনের ঘটনা এক বা একাধিক ঘটে। ন্যূনতম ভোট না পেয়ে জামানতের টাকা রক্ষা করতে পারেন না প্রার্থীরা।
নির্বাচনে ভুয়া বা ডামি প্রার্থী নিয়ে ইদানীং সেভাবে আলোচনা না হলেও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এর ব্যাপক প্রচার ছিল।
এর আগে নানা নির্বাচনে দেখা গেছে, প্রার্থী হলে ভোটের দিন গাড়ি সুবিধা, কেন্দ্রে এজেন্ট দেয়ার সুবিধার কারণে প্রধান প্রার্থীরা একাধিক নেতাকে প্রার্থী করেন, যারা আসলে তাদের হয়ে কাজ করতেন। কেউ অভিযোগ তুললে এক সঙ্গে তুলতেন, আবার কেন্দ্রে বেশি লোক থাকলে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হতো।
প্রার্থী হলে জামানতের টাকা তখনও দিতে হতো। তবে তা ছিল ন্যূনতম, যা পরে বাড়ানো হয়। যদিও এখন যে পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়, সেটি আরও বেশি করার প্রস্তাব ছিল নির্বাচন কমিশনের। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির মুখে পরে কমানো হয়।
বর্তমানে সংসদীয় আসনের জন্য প্রার্থীদেরকে ২৫ হাজার টাকা, উপজেলা নির্বাচনে ১০ হাজার টাকা আর চলমান পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যার হিসাবে জামানতের টাকা আগে জমা দিতে হয়।
কেউ যদি প্রদত্ত ভোটের সাড়ে ১২ শতাংশ না পান, তাহলে তিনি জামানতের টাকা ফেরত পাবেন না।
পৌরসভা নির্বাচনে অনধিক ২৫ হাজার ভোটারের এলাকায় ১৫ হাজার টাকা, ২৫ হাজার ১ হতে ৫০ হাজার ভোটারের এলাকায় ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ভোটারের এলাকার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং এক লাখের বেশি ভোটারের এলাকার জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত জমা রাখতে হয় নির্বাচন কমিশনে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য জামানত পাঁচ হাজার টাকা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নয় হাজার ৫০০ টাকা আর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে এক হাজার টাকা জামানত জমা রাখতে হয়।
এই টাকা জমাদানের প্রমাণ স্বরূপ ট্রেজারি চালান বা কোনো তফসিলি ব্যাংকের পে-অর্ডার বা পোস্টাল অর্ডার জমা দিতে হয়।
গত ২৮ ডিসেম্বর এবং পরে ১৬ জানুয়ারি দুই ধাপে পৌর নির্বাচনে ভোট হয়।
প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ১৬০ জন। এদের বেশির ভাগই কাউন্সিলর প্রার্থী।
দ্বিতীয় ধাপে ৬০ পৌরসভায় প্রার্থী ছিলেন তিন হাজার ২৮৬ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে জামানতের টাকা যায় কোথায়
চলতি পৌরসভার নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে অনেক প্রার্থী জামানত হারালেও সংখ্যাটি এখনও অজানা নির্বাচন কমিশনের। ছবি: নিউজবাংলা
এই দুই ধাপে মোট কতজন প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন, সেই তথ্য এখনও নির্বাচন কমিশনে আসেনি। তবে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর বাইরে জামানত রক্ষা করতে পারার মতো ভোট পেয়েছেন কমই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীই জামানতের টাকা ফেরত পাওয়ার মতো ভোট পাননি।
জামানত হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মোট কত টাকা জমা পড়েছিল, আর এর মধ্যে কত টাকা প্রার্থীরা ফেরত পাবেন, এমন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে আমরা এই হিসাব সেভাবে করি না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষে আমরা জামানত বাতিল হওয়া প্রার্থীদের একটা তালিকা করি। সেই তালিকা অনুযায়ী বাতিল হওয়া জামানতের টাকা অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়।’
বাকি প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশন অফিসের মাধ্যমে জামানতের টাকা তুলে নেন বলেও জানান তিনি।
অবশ্য বিজয়ী সব প্রার্থী টাকা নিতে আসেন কি না, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
জামানতের টাকা ফেরত পেতে যে প্রক্রিয়া, ধনাঢ্য প্রার্থীরা সেটা করে এই টাকা নিতে আগ্রহী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্নসচিব আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামানাতের টাকা ফেরত পাওয়ার একটা পদ্ধতি আছে। নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর ইসির নির্দিষ্ট শাখায় আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়। সেখানে আইন মেনে আবেদন করে সবাই তাদের জামানত তুলে নিতে পারেন।’
তথ্য পাওয়া কঠিন
এখন পর্যন্ত দেশে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে মোট কত জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন, তাদের কতজন জামানত হারিয়েছেন, এই বাবদ মোট কত টাকা নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যানই নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই।
তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি হিসাব দিতে পেরেছেন কমিশনের মুখপত্র আসাদুজ্জামান।
ওই নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন মোট এক হাজার ৮৫৫ জন। যার মধ্যে জামানত হারান এক হাজার ৪২২ জন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৯৮ জন প্রার্থীর জামানত বাতিল হয় চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের।
এরপরই সবচেয়ে বেশি জামানত হারায় বিএনপির ১৫২ জন। অবশ্য দলটি ২৬৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
তৃতীয় অবস্থানে জাতীয় পার্টি। তাদের ১৫৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩৩ জন জামানত হারিয়েছেন।
ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করা জামায়াত ইসলামীর ২২ জনের ১১ জনই জামানত হারান।
১৩০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১১৬ জনের।
ওই বছর জামানত হিসেবে সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে তিন কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তবে এর আগের সংসদ নির্বাচন বা এই জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামানত হিসেবে নির্বাচন কমিশনের আয় কত ছিল সে তথ্য পাওয়া যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান জানান, জামানতের বাজেয়াপ্ত অর্থ তারা ব্যবহার করেন না। সরকারকে দিয়ে দেন।
তাহলে প্রতি নির্বাচনের পর কত টাকা জমা দেয়া হয়, সে হিসাব তো থাকার কথা-এমন প্রশ্নে কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে তথ্য নেই। এনবি নিউজ