রাঙ্গামাটি :- রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের একটি উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের কাজ দেড় বছরে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও চার বছর ধরে ফেলে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তাই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় অসুবিধায় পড়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলাধীন ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঘিলাছড়ি নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। শিক্ষার্থী অনুপাতে এই প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ কম থাকায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় পড়ে। এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ১২ কক্ষের চারতলা ভবনের কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কার্যাদেশ অনুযায়ী কয়েক জন ঠিকাদার পালা বদল করে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ এর কাজও শুরু করেন। কিন্তু ১৮ মাসে কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ৪৮ মাসে কাজটি শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। তবে ঠিকাদার কর্তৃক ভবনের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কাজ করে কোটি টাকা বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন- এরপর থেকে দেখা মিলছে না ঠিকাদারের। নির্মাণাধীন ভবনের দেয়ালে শ্যাওলা লেগে আছে। ভবনটি দেখতে মনে হয় পরিত্যক্ত। এদিকে বিদ্যালয় ভবনের কাজ চলমান থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরাতন ব্যবহার অনুপযোগী অন্য কক্ষ গুলোর সংস্কার কাজ করায় নি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে কার্যকরী হস্তক্ষেপ আশা করছে তারা এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ এলাকার সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্টাতা সদস্য ইউসুফ খান বলেন, স্থানীয় সমাজের বিত্তবানদের এর বদান্যতায় আমরা বিদ্যালয় ভবনের বরাদ্দ পেলেও ভবনটির কাজ শেষ হবে কি-না এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারের লোকজন এখন আর কাজের গোড়ায় আসছে না। ঠিকাদারের কিছু মালামাল যত্রতত্র পড়ে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টাসহ মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করছি করছে তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্রদ্ধা শংকর তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, প্রায় অনেক দিন হয় বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় যেসব কাজ হয়েছিল, সে গুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মালামাল নষ্ট হচ্ছে। দেওয়ালে শ্যাওলা লেগেছে। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে এবং এসএসসি শিক্ষার্থীদের কোথায় বসিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে- এ নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বিদ্যালয়ের এই ভবন নির্মাণ এর অবস্থা জানিয়ে এবং শ্রেণিকক্ষের সমস্যার কথা উল্লেখ করে কয়েক দফায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এর নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করেছি।
এবিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দীন নাথ তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এই বিষয়টি রঙ্গোমাটি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীকে ফোন দিলেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এবিষয়ে জানতে রাঙ্গামাটি জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মুঠোফোনে বলেন, আমি সবকিছু বলতে পারছি না। নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।
রাঙ্গামাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর’র সহকারি প্রকৌশলী মফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, নানা অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। চলতি ২০ জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন না করলে ঠিকাদার লিটনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে লিটনের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের পেক্ষাপট ও বিভিন্ন সমস্যা থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে এবং কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান।পার্বত্যনিউজ