রাঙ্গামাটি:- বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর অনুমিতই ছিলো তার প্রত্যাবর্তন। কিন্তু সেটা কিভাবে হয় তা নিয়ে ছিলো সংশয়,জল্পনা কল্পনাও। কিন্তু প্রচলিত ধারার বাহিরে গিয়ে কোন শোডাউন বা বহর নিয়ে অফিসে না ঢুকে কিছুটা ধীরলয়েই নিজের সমর্থিতদের নিয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জেলা কমিটির ব্যানারে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচী দিয়েই ফের মাঠে ফিরলেন রাঙ্গামাটি বিএনপির ড্যাশিং নেতা হিসেবে পরিচিত,সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ভূট্টো।
দলের এক কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে কিছু আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে গেলো বছরের ১৮ মে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। ৯ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতা মাহবুবের রহমান শামীম নিয়ে কিছু কথা বলেন,অভিযোগ তোলেন ভূট্টো। যা ভালো চোখে নেয়নি দলটির হাইকমান্ড। তারই জেরে ৯ দিন পর বহিষ্কৃত হন। দীর্ঘ ৮ মাস পর সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় ২২ জানুয়ারি।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দুইদিন পর রাঙ্গামাটি ফিরে এসে ২৮ জানুয়ারি মহিলা দলের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে কাঠালতলস্থী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা মহিলা দলের আয়োজনে এই শীতবস্ত্র শীতার্ত মানুষের মাঝে তুলে দেয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আবু নাছের, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী নূর জাহান বেগম পারুলসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। এসময় প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র তুলে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন মহিলা দলের নেত্রীরা।
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে সরাসরি রাঙ্গামাটি আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার,সাবেক উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমাসহ দলটির দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনেন তিনি। একইসাথে নিজ দলের নেতাদের সতর্ক করে দেন, একই পরিণতি যেনো ভোগ করতে না হয়। বরাবরই ছাঁচাছোলা বক্তব্যের জন্য বিখ্যাত ভূট্টোর বক্তব্যের চেনা সুর,তার লয়,ছিলো না এদিন ! কিছুটা সতর্ক,সংযমী যেনো ! তবে আত্মপ্রত্যয়ীই মনে হচ্ছিলো তাকে,চেনা পরিসরে চেনা মানুষদের সামনে পুরনো রূপে ফেরার দিনেও।
এসময় মঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন ভূট্টোর সাম্প্রতিক সময়ের স্থানীয় রাজনৈতিক অভিভাবক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান ও তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী, মৈত্রী চাকমা। একই মঞ্চে ভূট্টো-দীপেন-মৈত্রী চাকমার উপস্থিতি বেশ অনেকদিন পরই ! তবে ব্যানারে নাম থাকলেও রাঙামাটি না থাকায় উপস্থিত ছিলেন না আরেক প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পনির। আর দেশে না থাকায় স্বভাবতই ছিলেন না জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু। ব্যানারে বা মঞ্চে, কোথাও ছিলেন না, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু নাছির আর সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদের উপস্থিতির কারণে অনুষ্ঠানের সার্বজনীনতার মোহময় চিত্র চোখে পড়লেও দলের ভেতরে ক্ষমতার ভারসাম্যের জোর লড়াইয়ের চোরাস্রোতের আভাস ঠিকই দিয়ে গেলো মঙ্গলবারের সকাল ! যে সকালে মহিলা দলের শীতবস্ত্র বিতরণের আড়ালেও স্থানীয় নেতৃত্বের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগাম চিত্র খানিকটা হলেও সামনে চলে এলো, আরো একবার ! আসছে দিন হয়ত বহু সমীকরণের বার্তাই নিয়ে আসবে !পাহাড়ের খবর