র‍্যাব-পুলিশসহ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের সুপারিশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পেট:- র‌্যাব-পুলিশসহ নিরাপত্তাভিত্তিক সকল প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের সুপারিশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনমালে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিচার বিভাগের সংস্কারের সুপারিশের কথাও জানিয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা।

সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অধিবেশনে সংস্কারকে দীর্ঘমেয়াদি করতে প্রস্তাব উত্থাপনেরও পরামর্শ দিয়েছে এইচআরডব্লিউ।

‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ ’ শীর্ষক ৫০ পাতার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কুক্ষিগত নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আইনের মাধ্যমে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার যে পদ্ধতি রয়েছে তা বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যেগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, সংস্কারের মাধ্যমে সিভিল সার্ভিস, পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে আলাদা করা উচিত। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা নেয়া উচিত বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেন পিয়াসন বলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ১০০০ বাংলাদেশি প্রাণ দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশে মানবাধিকারের ভবিষ্যত নির্মাণের একটি যুগান্তকারী সুযোগ এনে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত এবং কাঠামোগত সংস্কার না করে তাহলে ভবিষ্যতের সরকারগুলো যেকোনো সময় দমন-পীড়নের পথে পরিচালিত হতে পারে। যদি এমনটা হয় তাহলে কষ্টার্জিত অভূতপূর্ব এই সুযোগ সম্পূর্ণরূপে হাত ছাড়া হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০ বছরের বেশি গবেষণা এবং নথিপত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য, বর্তমান ও সাবেক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বর্তমান সুপারিশমালা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে গত ১৫ বছর ধরে সরকারের সমালোচক এবং বিরোধী দলের সদস্যদের জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নজরদারি এবং নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। নিজ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে হাসিনা বিচার বিভাগ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাশাপাশি আইনপ্রয়েগকারী সংস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিষয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, উচ্চ পদের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্যকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে হাসিনা সরকার। যার ফলে পুলিশ ক্রমশ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠে। তারা বছরের পর বছর ধরে দলীয় ক্যাডরদের মতো আচরণ করেছে।

ইতিমধ্যেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ছাত্রদের ডাকে সাড়া দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আগে এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েকটি কমিশনও গঠন করেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বাইরেও সংস্কার প্রক্রিয়া যেন দীর্ঘ হয় সে বিষয়ে ২০২৫ সালের মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের অধিবেশনে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা উচিত। কেননা বাংলাদেশে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা খাতের সংস্কারে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন রয়েছে।

হাসিনার ক্ষমতাচুত্যির পরও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পুলিশ। তারা এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। পুলিশ আগের মতোই মানুষকে নির্বিচারে আটক করছে। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণ ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করছে তারা। ফলত পুলিশ যে কাউকেই গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতে পারছে এখনও।

১৪ই ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের গুম কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, হাসিনার আমলে অন্তত ৩ হাজার ৫০০ মানুষকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে। এ বিষয়টি তদারক করতেন শেখ হাসিনা, তার আত্মীয় মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।এদের সঙ্গে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও বিষয়টি তদারকি করতে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়।

হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, ‘আয়নাঘর’ খ্যাত হাসিনার গোপন কারাগার থেকে তিনজনকে মুক্তি দেয়া হয়। যাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাসেম বর্ণনা করেছেন যে, তাকে যেখানে রাখা হয়েছিল তা বন্দীদের মৃত্যুর চেয়েও আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে। জাতীয় গুম কমিশনের তদন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে যে, এসব নির্যাতনের সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও জড়িত ছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে আইন প্রয়োগের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এছাড়া প্রসিকিউশন এবং বিচার বিভাগ যাতে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্যও সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions