ডিসি সম্মেলন,আসতে পারে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির পরামর্শ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরি, আবাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে এবারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে। পাশাপাশি আসছে রমজানে মজুতদার অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, মব ট্রায়াল ঠেকানো, চুরি-ডাকাতি-সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আসতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।২০০৯ সাল থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রস্তাবও এবারের সম্মেলনে উঠতে পারে।

এদিকে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হলেও সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসি জনপ্রশাসনের ওপরই নির্ভর করে থাকে। এ কারণে আসছে ডিসি সম্মেলনের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সম্মেলনে অংশ নিতে আসা জেলা প্রশাসকদের সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

ডিসিরা মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়, উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তারা। এ জন্য সম্মেলনে তাদের প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের মধ্যে সরাসরি মতবিনিময় এবং সরকারের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাধারণত প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ডিসি সম্মেলন।

এবারের ডিসি সম্মেলন বসতে যাচ্ছে আগামী ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন পর্যন্ত উদ্বোধন-পরবর্তী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন অধিবেশনের কার্যসূচি সচিবালয়ের বিপরীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেভাবে প্রস্তুতিও চলছে। তবে সচিবালয়ের ভেতরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য নির্মীয়মাণ নতুন ভবনে যদি অধিবেশনের কার্যসূচিগুলো করা যায়, সে ক্ষেত্রে ডিসি সম্মেলনের বাকি পর্বগুলো সেখানে করার চিন্তা রয়েছে। এখনও সবকিছু প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, এখন শুধু ডিসি সম্মেলনে তারিখ আর উদ্বোধনের সময় অনুমোদন হয়েছে। অধিবেশনের বিস্তারিত কার্যসূচি পরে নির্ধারিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপে ডিসি সম্মেলনের সাধারণ রেওয়াজগুলোর (বিভিন্ন অধিবেশন) বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনের আগেই বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসককে মাঠ থেকে তুলে এনে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। জানুয়ারির মধ্যে প্রশাসনের ২৪তম ব্যাচকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়ে গেলে এই ব্যাচের ডিসিরা মাঠ থেকে প্রত্যাহার হবেন।

জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে গঠিত ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ জোরেশোরে তাদের কাজ শুরু করেছে। এই ফাউন্ডেশনে সরকার থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বরাদ্দ প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এ কাজ ডিসিরা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এর অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে এই সম্মেলনে।

এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনু বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, তারিখ চূড়ান্ত হওয়ায় সম্মেলনের কাজ আমরা পুরোদমে শুরু করেছি। সব ডিসিকে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিভাগের এক জেলা প্রশাসক বলেন, দেশে দীর্ঘদিন সুষ্ঠু ভোট হয়নি। মানুষ এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধে নিজের ভোটটি দিতে চায়। আমার ধারণা, আসছে ডিসি সম্মেলনে নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে করণীয় এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

রংপুর বিভাগের এক জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিস হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ও পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমি আমার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেব।

বরিশাল বিভাগের এক জেলা প্রশাসক বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের (ডিসি) প্রস্তাবগুলো সরকারকে দেব। কী কী প্রস্তাব দেওয়া হবে, তা তো এত আগাম বলা যাবে না। তবে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো নিয়েই সম্মেলনে মূল আলোচনা হবে, এটি বলা যায়। সরকার থেকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শগুলো আমাদের দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র বলছে, ডিসি সম্মেলনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, ই-গভর্ন্যান্স, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের ব্যাপারে আলোচনা হবে।

কার্য-অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ। সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মুক্ত আলোচনাসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন ডিসিরা। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ডিসিদের কার্য-অধিবেশন, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ, স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা আইন উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও একটি সমাপনী অনুষ্ঠান এবং সংস্কার কমিশনের কমিটির সঙ্গে ডিসিদের বৈঠক রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হবে এসব বৈঠক।

উল্লেখ্য, গত ডিসি সম্মেলনে ২১২ সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে এক বছরের (স্বল্পমেয়াদি) মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল এ রকম সিদ্ধান্ত ছিল ৫২টি, যার বাস্তবায়নের হার ৮৯ শতাংশ। তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের (মধ্যমেয়াদি) জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ৯০টি, এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার ৫৯ শতাংশ। আর পাঁচ বছরের জন্য সিদ্ধান্ত (দীর্ঘমেয়াদি) নেওয়া হয়েছিল ৭০টি, এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার ৪৫ শতাংশ।সমকাল

 

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions