ডেস্ক রির্পোট:- ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে প্রাধিকার অনুযায়ী একটি পেট্রোল নিশান গাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ২ আগস্ট তিনি দেশ ছেড়ে গেলেও গাড়িটি জমা দেননি। ডিএসসিসি গাড়িটি উদ্ধারে আইনি পদ্ধতি অনুসরণ না করে সাবেক মেয়র তাপসকে দায়মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে গত ২ সেপ্টেম্বর ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এই অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠির একটি দফায় উল্লেখ করা হয়, জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। দেশে কারফিউ জারি করা হয়। সরকারি আদেশে অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায় অফিস চালু হলে পরিবহন বিভাগের সব চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, সব গাড়ি নিরাপদে অফিসে আছে; কিন্তু মেয়রের গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তার হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে গত ৮ আগস্ট চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলে তিনি জানান, মেয়রের বাসায় আক্রমণ হয়েছিল। চালক গাড়িটি মেয়রের বাসায় রেখেছিলেন। পরে কী হয়েছে চালক তার কিছুই জানেন না। পরে ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা গাড়িটি আনার জন্য তাপসের বাসায় যান। তিনি গাড়িটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দেখতে পান—এভাবেই ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন।
ডিএসসিসির আইন শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, যে কোনো কর্মকর্তা গাড়ি বরাদ্দ নেওয়ার পর স্থান ত্যাগ করলে গাড়িটি সংস্থাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। সংস্থা সঠিক সময়ে গাড়ি বুঝে না পেলে কর্মকর্তাকে গাড়ি ফেরত চেয়ে নোটিশ দেবে। ফেরত না দিলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। এর পরও গাড়ি ফেরত না দিলে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সাবেক মেয়র তাপসকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ এমন চিঠি দিয়েছে বলে অভিযোগ।
তবে দায়মুক্তির উদ্যোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালায়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।
মন্ত্রণালয়কে অবহিতকরণ চিঠি দেওয়ার পূর্বে গাড়ি ফেরত চেয়ে চিঠি দিয়েছেন কি না কিংবা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন কি না, এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, ‘গাড়ি ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়নি বা থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি।’
জানা যায়, তাপস গাড়ি বরাদ্দ নিলেও চালানোর জন্য সিটি করপোরেশনের চালক ছিল না। কারণ তাপস তার ব্যক্তিগত চালক মো. জাকির হোসেনকে দিয়ে গাড়ি চালানোর কাজ করতেন। এখানেও নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন সাবেক মেয়র তাপস।
গাড়িটির ড্রাইভার মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘স্যারকে (তাপস) ২ আগস্ট সন্ধ্যার আগে এয়ারপোর্টে (হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি তার বনানীর বাসায় রেখে আমি আমার বাসায় চলে গিয়েছি। এরপর কী হয়েছে আমি কিছুই জানি না।’
তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাবেক মেয়র তাপসের অনুকূলে বরাদ্দকৃত পেট্রোল নিশান গাড়িটি (ঢাকা মেট্টো ঘ ১৫-৪৭৮৩) ডিএসসিসিকে ২০১৬ সালে সরবরাহ করে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানে প্রস্তুতকৃত কালো রঙের এ গাড়িটির মূল্য নেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন করা হয় ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর। সাত সিটের এ গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর VK56190676A, চেসিজ নম্বর JN1TANY62Z0035041, ওজন ৩৫০০ কেজি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ ব্যাপারে বলেন, দেশ ত্যাগের আগে গাড়িটি সংস্থাকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। গাড়িটি তাপসের আয়ত্তে থাকায় সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে এর দায়দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়।