বান্দরবান:- বান্দরবানে লামায় সড়ক সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নসামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে জাফর উল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স স্বত্বধিকারী ঠিকাদার ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন ভূইয়া বিরুদ্ধে। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর( এলজিইডি) সার্ভেয়ার ও ঠিকাদার যোগসাজশে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে কাজটি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সড়কটি গুণগত মানে কাজ না করায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই সড়কে শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কাজ শুরু হলেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সড়কটির দুপাশে চলছে পুরোদমে চলছে মাটি মিশ্রিত নিম্নমানের ইটের খোয়া(কংক্রিট) কাজ। সড়ক সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের ইট, মাটি মিশ্রিত ইটের খোয়া ও ঝংকার বালুর পরিবর্তে ঝিড়ি বালু দেয়া হচ্ছে। ফলে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব অনিয়মের কাজ করা সুযোগ পাচ্ছে ঠিকাদারের দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাছাড়া এর আগে পুরানো সড়ক ভালো ছিল বলে জানান অনেকেই।
উপজেলার এলজিইডি তথ্যমতে, লামায় সরই ইউনিয়নের বৃদ্ধাশ্রম থেকে লুলাই পাড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রশস্ত ধরা হয়েছে উভয় পাশে ৬ ফিট করে মোট ১২ফিট। ২০২৩-২৪ অর্থ সালে প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছে ২কোটি ৫১ লাখ। এই কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বান্দরবানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাফর উল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স। সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি সমাপ্তি ঘটবে চলতি বছরে ডিসেম্বর মাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক প্রশস্তকরণে যিনি বাস্তবায়ন করছেন তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলেন যান। কিন্তু সড়ক সম্প্রসারণের কাজে তত্ত্বধায়ন করছেন উপজেলা এলজিইডি সার্ভেয়ার। এতে নিজের ইচ্ছা মতন অনিয়ম করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত । এর আগে লামা-সুয়ালক সড়কের পাহাড়ের মাটি ও ঝিড়ি বালু ব্যবহার করায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
উপজেলা এলজিইডি সার্ভেয়ার জাকির হোসেন যোগসাজশে থাকায় এসব কাজের ঠিকাদাররা অনিয়মের আশ্রয় নেয় প্রতিনিয়ত। ফলে সঠিকভাবে কাজ না করায় বর্ষা মৌসুম এলে ফুটে উঠে দুর্নীতি চিত্র। তাছাড়া লামা উপজেলার এলজিইডি সকল ধরে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগও রয়েছে এই সার্ভেয়ার জাকির হোসেন বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এলজিইডি সার্ভেয়ার জাকির হোসেন অস্বীকার করে বলেন, এসব কাজে তিনি জড়িত নন। যে-সব অভিযোগ এনেছে সব ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরই ইউনিয়নের বৃদ্ধাশ্রম এলাকা থেকে লুলাই পাড়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের প্রশস্তকরণে রাস্তাটি বর্ধিতকরণ প্রকল্পে বর্তমানে উভয় পাশে ৬ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এতে রাস্তার প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ১২ ফুট ও বালু ফিলিং ধরা হয়েছে ২ফুট। কিন্তু এই সড়কের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। সড়কে কাজে মাটি মিশ্রিত নিম্নমানের ইটের খোয়া(কংক্রিট), স্থানীয় ঝিড়ি বালু ও বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে টেকসই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয়দের মাঝে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পুনরায় ভাঙন সৃষ্টি তৈরি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সড়ক কাজে নিয়োজিত ট্রাকচালক নুরুল আবছার বলেন, ঝিড়ি থেকে তোলা বালু ট্রাক করে এনে সড়কের পাশে রাখছি। আর আমি নতুন এসেছি নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে। এসব বিষয়ে ঠিকাদার বলতে পারবে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন তংচঙ্গ্যা ও সিএনজি চালক মোরশেদ বলেন, এখন যে সড়ক করছে সব নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হচ্ছে। বর্ষায় মৌসুম এলে ভাঙন ও গর্ত তৈরি হবে। তাছাড়া এই সড়কের চেয়ে আগের সড়ক ভালোই ছিল। আমরা চাই সঠিক নিয়মের মাধ্যমে কাজ হোক এটাই দাবি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার নামজুল হোসেন ভুইয়া সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমার জানা মতে লুলাইং সড়কের কাজে অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করেন। আর আমি বান্দরবানের বাহিরে আছি আসলে সরাসরি দেখা হবে বলে জানান তিনি।
লামা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আবু হানিফ স্বীকার করে বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগটি পেয়ে সড়কের থাকার মাটি মিশ্রিত ইটের খোয়া দ্রুত সরানো জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর সড়কের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ না করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।