ডেস্ক রির্পোট:- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা এবং আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে আদালতে রিট করা হয়েছে। গতকাল হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, মো. আবুল হাসনাত (হাসনাত আব্দুল্লাহ) ও মো. হাসিবুল ইসলাম পৃথক দু’টি রিট আবেদন করেন। রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা দেয়ার আরজি জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলো হলো- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, তরীকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (বড়ুয়া) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। রিটকারীদের আইনজীবী আহসানুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মঙ্গলবার শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।
এ ছাড়া রিটে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এসব দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে কেন বিরত রাখতে নির্দেশনা দেয়া হবে না- সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।
সমন্বয়ক সারজিস আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বলেন, ২টি রিট করেছি। ১টি আওয়ামী লীগের বিগত ৩টি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দিবে না সে বিষয়ে। দ্বিতীয়টি এই মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদেরকে পলিটিক্যাল সকল অ্যাক্টিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না সে বিষয়ে। দল হিসেবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনো কথা রিটে নেই।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৩শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা ১৮ এর উপধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো এবং ওই আইনের তফসিল-২ এ ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। গত ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে রিট আবেদন করেছিলেন আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া নামের এক আইনজীবী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার দায়ে রিটটি দায়ের করা হয়েছিল। তবে, সেই রিটটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।