সহকারী উপদেষ্টা করা হবে শিক্ষার্থীদের

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৩ দেখা হয়েছে

উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে একাধিক সিদ্ধান্ত
সহকারী উপদেষ্টা করা হবে শিক্ষার্থীদের
বাতিল হবে সাইবার সিকিউরিটি আইনের কিছু বিধান

ডেস্ক রির্পোট:- অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার ব্যবস্থায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন এবং আর্থিক খাত সক্রিয় করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তাঁর বর্তমান বাসভবন ও কার্যালয় ‘‌যমুনা’য় গতকাল শুক্রবার দুপুরে এই বৈঠক হয়। এর আগে উপদেষ্টাদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করা হয়।

এর আগে সকাল ১০টায় বৃষ্টির মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্য উপদেষ্টারা এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে তিনি উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় যোগ দেন। আজ শনিবার সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে যাবেন তিনি। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেলে যাবেন আহতদের দেখতে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার শপথ নিতে না পারা তিন উপদেষ্টার শপথ আজ শনিবার বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। তবে সময় এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব কাজী শাহজাহান।

১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ জন বৃহস্পতিবার শপথ নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ হয়নি তিন উপদেষ্টার। তারা হলেন– সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম।

প্রথম বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা
উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠক শুরু হয় দুপুর ১২টার দিকে। বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। স্বাধীন মতপ্রকাশে করণীয়, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, সরকার ব্যবস্থায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্গঠন, আর্থিক খাত সক্রিয় করতে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে পরিবর্তন আনা, ব্যবসায় পরিবর্তন ও বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হয়। জুমার নামাজের বিরতি দিয়ে আবার সভা চলে। বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অংশ নেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, তা নিয়ে এখনই আলোচনা করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আপনি কী সংস্কার চান, সেটা না বুঝে মেয়াদের কথা বলতে পারব না। আর আপনারা যদি সংস্কার না চান, তখন আরেক কথা। কাজেই এখনই মেয়াদ-মেয়াদ করে অস্থির হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যাতে একটি গণতান্ত্রিক দেশের যাত্রা করতে পারি, তার প্রস্তুতির জন্য অন্তর্বর্তী এই সরকার। সে প্রস্তুতির জন্য যে সময় দরকার, সেটাই আমরা নেব। শেষ পর্যন্ত আমরা গণতন্ত্রের দিকে যাব।’

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য তারা (শিক্ষার্থীরা) আন্দোলন করেছে। সুতরাং, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, আজ বেশির ভাগ আলোচনা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে।’

তিনি জানান, সাইবার সিকিউরিটি আইনের যেসব বিধানের অপ্রয়োগ হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে বাতিলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে এ উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈঠকে আইজিপিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তাঁর কাছে কী তথ্য আছে? তা ছাড়া পুলিশের অনেক থানা সচল নয়। ফলে তাঁর কাছে সব তথ্য থাকবে– সেটাও আমরা মনে করি না। তাই আলোচনা হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে নামানো, বিশেষ করে পুলিশ সদস্যদের।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। সব মন্ত্রণালয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, কোন কাঠামোতে যুক্ত করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা হবে।’

অপর উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে ‘সহকারী’ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। ছাত্রসমাজ আমাদের দেশের একটি বড় শক্তি। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা তাদের কাজের সুযোগ দিতে চাই। এ লক্ষ্যে উপদেষ্টাদের সঙ্গে ‘সহকারী উপদেষ্টা’ পদ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ তৈরি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় দলগুলো কিন্তু স্বৈরাচারী ব্যবস্থা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে জায়গায় আমাদের ছাত্রসমাজের মাধ্যমে একটি অভ্যুত্থান হয়েছে। এই ছাত্রদের ওপর আস্থা রেখে জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। এখন ছাত্রসমাজ যেহেতু সরকার ও রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছে, আমি আশা করব সাধারণ জনগণ এই ছাত্রসমাজের ওপর আস্থা রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেহেতু আমরা দায়িত্ব বুঝে নিয়েছি; তাই আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

সুপ্রদীপকে সরকারে রাখার প্রতিবাদ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা পদে ডাক পাওয়া সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমাকে রাখার প্রতিবাদ জানিয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সমাজ।

গতকাল বিকেলে সরকারের প্রথম বৈঠক চলাকালে হঠাৎ ‘ক্ষুব্ধ আদিবাসী সমাজ’ ব্যানারে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে তারা দাঁড়িয়ে যান।
এ সময় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহসভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করেই তাদের প্রতিনিধি ঠিক করা এক ধরনের মশকরা।’ চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানী ইয়ান ইয়ান বলেন, ‘আজ আদিবাসী দিবস। কিন্তু এই দিনে আমাদের সঙ্গে নতুন সরকার মশকরা করছে। সরকার আমাদের সঙ্গে বসুক, আলোচনা করে প্রতিনিধি ঠিক করা হোক।’

উপদেষ্টাদের দপ্তর বণ্টন
প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল উপদেষ্টাদের মাঝে দপ্তর বণ্টন করেন। দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার হাতে রয়েছে ২৭ মন্ত্রণালয়। তাঁর হাতে রয়েছে– মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা, সড়ক পরিবহন ও সেতু, খাদ্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, ভূমি, বস্ত্র ও পাট, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলপথ, জনপ্রশাসন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, নৌপরিবহন, পানিসম্পদ, মহিলা ও শিশু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সংস্কৃতি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, মুক্তিযুদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদ পেয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; আসিফ নজরুল পেয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়; আদিলুর রহমান খান পেয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়, হাসান আরিফ পেয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; মো. তৌহিদ হোসেন পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; শারমিন মুরশিদ পেয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন পেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন পেয়েছেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়; ফরিদা আখতার পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নুরজাহান বেগম পেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়; মো. নাহিদ ইসলাম পেয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions