ডেস্ক রির্পোট:- ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুনে কত টাকা লেনদেন হয়ে থাকতে পারে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার এক আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, এই খুনে সুপারি (খুনের চুক্তি) ছিল ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ধরা পড়া খুনির ভাগে মিলেছে কোটি খানেক। তবে পুলিশ এখনো এসব টাকার কোনো হদিস পায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুনের পরিকল্পনাকারী এমপি আনোয়ারুল আজীমের বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। এমপি আনোয়ারুল আজীমকে খুন করার জন্য ভাড়াটে খুনি আমানউল্লাহর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে ভারতে নেওয়া হয় তাঁকে। তার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের দল এই ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নেয়। খুন করে লাশ টুকরো টুকরো করে গুম করে। পরে ১৫ মে দেশে ফিরে আসে।
বুধবার (২২ মে) মোহাম্মাদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
তদন্ত সংশ্লিষ্টে জানা যায়, গ্রেপ্তার আমানউল্লাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। ১৯৯১ সালে যশোরের অভয়নগর এলাকায় গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০০ সালে আবারও ইমান নামে আরেক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবন্দি ছিলেন। জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করতেন।
এমপি আজীমকে হত্যা করতে তাঁর সঙ্গেই চুক্তি করেন আক্তারুজ্জামান। পাসপোর্ট না থাকায় বেনাপোল দিয়ে গত ৩০ এপ্রিল অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে কলকাতা নেওয়া হয় তাঁকে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির প্রধান অখিলেশ চতুর্বেদী সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীম উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরের কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার রায়ের। সন্দীপের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। আখতারুজ্জামানই ওই ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঝিনাইদহ–৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশও ছিল। গত ১২ মে তিনি দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস।
বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। পরে দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে নিজের বাসায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যতটুকু তথ্য তাঁরা পেয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের লোকজনই পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে মনে হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আনোয়ারুল আজীম যে এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন, ঝিনাইদহ সীমান্তবর্তী ওই এলাকাটি একটি ‘সন্ত্রাসকবলিত’ এলাকা।