ডেস্ক রির্পোট:- মাগুরায় আট বছরের শিশুর সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক ঘটনা সামনে আসার পর ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘৃণা প্রকাশের সঙ্গে সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে ধর্ষক-নিপীড়কদের ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি।
ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে গতকাল রোববারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সামাজিক সংগঠন দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছে। এ ছাড়া সারা দেশে কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ মিছিল, মশাল ও লাঠি মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ সময় তারা আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই; সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে; ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমন নানা স্লোগান দেন।
ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে শনিবার মধ্যরাতে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। যাদের বেশিরভাগই ছিলেন নারী শিক্ষার্থী। গতকালও সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও প্রতিবাদী সমাবেশের মাধ্যমে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ‘ফাঁসি’ কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল নিয়ে বের হন ঢাবির রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা থালাবাসন, খুন্তি, চামচ হাতে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ‘আমার সোনার বাংলায়,
ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ এমন নানা প্রতিবাদী স্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলেন।
সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একে একে বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দেন। এরপর রাত ২টার দিকে হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর মাঝে আত্মপ্রকাশ করে ‘ধর্ষণ বিরোধী মঞ্চ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাবি মুখপাত্র রাফিয়া রেহনুমা হৃদি ও সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এই ঘোষণা দেন। ধর্ষণের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও আছিয়ার ঘটনায় বিচারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অন্তত ৩০টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন। বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগ আলাদা আলাদা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে এবং লিখিত বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন রাজধানীর ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা কলেজের হলপাড়া থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান তারা। পরে ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এই মিছিলে যোগ দেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিলটি আজিমপুর মোড় ঘুরে পলাশী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে দিয়ে নীলক্ষেতে প্রতীকী ধর্ষকের কুশপুত্তলিকা দাহর মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়।
শনিবার মধ্যরাতে সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল ও পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা। প্রতিবাদ সমাবেশে তারা বলেন, সমাবেশে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করা না পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না, তা জানতে চান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, দলীয় সরকার না হওয়া সত্ত্বেও ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা কেন করতে পারছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তারা।
গাজীপুরের টঙ্গীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্যোগে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার রাত সাড়ে ৯টায় টঙ্গী কলেজ গেট থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে চেরাগ আলী মোড় প্রদক্ষিণ করে পুনরায় টঙ্গী কলেজ গেটের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে একটি মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পরে আবার সেখানে এসে মিছিলটি শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গোলচত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।
এ ছাড়া খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কলেজ রোডে গিয়ে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। দেশব্যাপী যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে নড়াইলে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ) নড়াইল জেলা শাখার আয়োজনে শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নড়াইল প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয় এবং পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাধারণ জনগণের ব্যানারে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলটি শহরের চকবাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উত্তর তেমুহনী এলাকায় গিয়ে শেষ হয় এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আজগানা ইউনিয়নবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর শহরে এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।