বান্দরবান:- বান্দরবানের রুমা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল স্লিপের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর’র বিরুদ্ধে। উপজেলায় মোট ৬৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট থেকে শিক্ষা উপকরণ কেনার অজুহাত দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করেছেন তিনি। এছাড়াও তার ১৭ সেকেন্ড অর্থ লেনদেনের একটি ভিডিও প্রতিবেদক হাতে এসেছে।
এদিকে অর্থ লেনদেন ১৭ সেকেন্ড ভিডিওতে দেখা যায়, নিজ অফিসে কক্ষে বসে টাকা গুণে ড্রয়ার ঢুকাচ্ছেন রুমা উপজেলার স্কুলের সভাপতি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর। সেই সাথে একটি বহি খাতায় নোট করে রাখছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
অভিযোগ আছে, উপজেলার ৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ হাজার টাকা ও ৫০হাজার টাকা স্লিপের বরাদ্দ টাকা থেকে শিক্ষা উপকরণ কিনার অজুহাত দেখিয়ে ৭-৮ হাজার টাকা করে প্রত্যেকটি স্কুল থেকে নিয়েছে রুমা উপজেলার স্কুলের সভাপতি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে বলে অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, আলীকদম উপজেলাতে থাকাকালীন একই ভাবে অর্থ লেনদেন জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপরই তাকে ষ্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে রুমা উপজেলার শিক্ষা অফিসে বদলী করা হয়। এতেও ক্ষান্ত হননি একইভাবে রুমাতেও বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বিদ্যালয় ভিত্তিক উন্নয়ন ও সংস্কার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এই বরাদ্দ প্রতি বছরের এমএমসি’র ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও এবারে ২০২৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে দায়িত্ব দিলেন সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধরকে। তবে তিনি উন্নয়নের কাজে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৭-৮ হাজার টাকা করে প্রধান শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন ঐ সহকারী শিক্ষা অফিসার।
এ বিষয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের (নাম প্রকাশ্যের অনিচ্ছুক) সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা জানান, শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর প্রতিবারই নানা অজুহাত দেখিয়ে অর্থ আত্মসাত করে গেছে। নানা কারণ দেখিয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার আবার ৫ হাজার টাকা নেন। আত্মসাতের অভিযোগ এনে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রাথমিক বিভাগের সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর’র সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল ধরেননি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা আশীষ চিরান’র সাথে বিষয়টি সত্যতা জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা তিনি বলেন, আমি তো কয়েকটা দিন একটা ট্রেনিং ছিলাম, ওনি (আশীষ কুমার ধর) অফিসে থাকা কালীন প্রধান শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা গুলো হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এবিষয়টি আরো খুঁটিয়ে দেখব।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি দায়িত্ব পাওয়াতে অর্থ আত্মসাত করার সুযোগ পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা।
বান্দরবানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই বলেন, আমার কাছে রুমার সহকারী শিক্ষা অফিসার এর বিরুদ্ধে রুমার শিক্ষকগণরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এই অভিযোগে বিষয়টি আমি আর জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তা শাহ মোজাহিদ উদ্দিন’র সাথে বিষয়টিকে নিয়ে আলাপ করে এ কয়েকদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি করে যথাযথ ব্যবস্থা নিব। ওই সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার ধর এর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।