তিন বিষয়ে আপত্তি আইএমএফের,বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ডলার দর বেঁধে দেওয়া, রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি ও কৌশলে খেলাপি ঋণ গোপন করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির ওপর আপত্তি তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই সঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), রাজস্ব আদায় অনুপাতে ঘাটতি (ট্যাক্স জিডিপি রেশিও) ও রপ্তানি আয়ের হিসাব নিয়েও সংস্থাটির প্রতিনিধিদল আপত্তি জানিয়েছে। তবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা, শক্তিশালী টেকসই ও ন্যায়সংগত প্রবৃদ্ধির জন্য সমর্থন থাকবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। গতকাল সোমবার আইএমএফের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মিটিং শেষে সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আইএমএফ ঢাকায় সফররত স্টাফ মিশনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, ডলার বাজার, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক লেনদেন (বিওপি) পদ্ধতি, রাজস্ব সংস্কার, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি, খেলাপি ঋণ ও জ্বালানি পণ্যের আমদানিতে ভর্তুকিসহ ৪৭টি ইস্যুতে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। বৈঠকে সংস্থাটির ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া পরামর্শগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দাতা সংস্থাটি হাতেগোনা কয়েকটি শর্ত ছাড়া প্রায় সবকিছুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে রিজার্ভ হিসাবায়নে বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল মেনে চলছে। একই সঙ্গে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ (এনআইআর) হিসাবে সংরক্ষণ করছে। কিন্তু ডলার বিক্রি বন্ধের প্রতিশ্রুতির পরও আইএফটির চুক্তির কারণে সরাসরি ডলার না বেচে বিশেষ বিল পরিশোধে রিজার্ভ খয় হচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২০ টাকা বেঁধে দেওয়াকে বাজারভিত্তিক ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলছে তারা। সংস্থাটি বাজারের ওপর ডলার রেট ছেড়ে দিতে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের হিসাবে গরমিল খতিয়ে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরের জন্য ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন সংরক্ষণের বিষয়ে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সংস্থাটি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইএমএফ জানিয়েছে, তাদের ৪৭টি শর্তের মধ্যে ৪০টি শর্ত পূরণ কিংবা পূরণের পথে রয়েছে। এজন্য তারা আগের ৪৭০ কোটি (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন) ডলা ঋণের সঙ্গে নতুন করে চাওয়া ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) ডলার ঋণের বিষয়ে মোটামুটি ইতিবাচক। আর গভর্নর দেশে না থাকায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে রেপ-আপ বৈঠকে ঋণের কিছু জানানো হয়নি। আগামী ২২-২৪ অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে সংস্থাটির অনুষ্ঠিত বৈঠকে গভর্নরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে মিশন প্রতিনিধিদল। সেখানে ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষ হয়েছে। সেখানে তারা মূল্যস্ফীতি, ডলার বাজার, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক লেনদেন (বিওপি) পদ্ধতি, রাজস্ব সংস্কার, ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি, খেলাপি ছাড়া প্রায় সব বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। আর আমরা তো চেষ্টা করছি। তারা বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। গভর্নর দেশে না থাকায় আনুষ্ঠানিক কোনো সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে মোট রিজার্ভের রেকর্ড ছিল ৪ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার, যা কমতে কমতে মাত্র ৩৪ মাসে এসে নেমেছে ২ হাজার ৪০০ কোটির ঘরে। আর ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

অন্য একটি সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণ দেওয়ার পর কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। খেলাপি কমাতে আইএমএফের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু খেলাপি না কমে দিন দিন বাড়ছে। গত জুন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে খেলাপি ঋণ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ। এদিকে অর্থঋণ আদালতে মামলায় আটকা খেলাপি ঋণ প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আবার অপলোপন (রাইট অফ) করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই দুই ধরনের খেলাপির তালিকা ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটে দেখানো হয় না। অন্যদিকে খেলাপি ঠেকাতে গত পাঁচ বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতপশিল করেছে ব্যাংকগুলো। তার মধ্যে একটা অংশ খেলাপি হয়েছে। সবমিলিয়ে আইএমএফের হিসাবে খেলাপি ঋণ প্রায় পৌনে ৬ লাখ কোটি টাকা। আর দেশে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৩৭ শতাংশ। অথচ আইএমএফ ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকৃত খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে আনতে শর্ত আরোপ করেছে।

এদিকে সফর শেষে আইএমএফ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বড় বন্যার কারণে মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কের স্তরে রয়েছে। পরিশোধের ভারসাম্যের অবনতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অর্থ পরিশোধ ও ব্যয়ের চাপের সময়ে রাজস্ব সংগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। এতে আর্থিক খাতের দুর্বলতা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের ক্রমাগত আর্থিক সংকোচন এবং অগুরুত্বপূর্ণ ব্যয়কে যুক্তিযুক্ত করাসহ নীতির সমন্বয়ের প্রশংসা করে আইএমএফ। একই সঙ্গে সংস্থাটি বাংলাদেশ এবং এর জনগণকে সমর্থন করার জন্য সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, চলমান আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির কাঠামোর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সংস্কারকে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব। এজন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা, শক্তিশালী টেকসই ও ন্যায়সংগত প্রবৃদ্ধির জন্য আইএমএফ সমর্থন জানাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় সংস্থাটি শোক প্রকাশ করে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions