ভোটাররা কেন্দ্রে না গেলেই সফলতা ধরে নেবে বিএনপি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ১৮৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবতা বিবেচনায় ‘ভোট ঠেকানো’র প্রশ্নে কঠোর অবস্থান থেকে শেষ মুহূর্তে সরে এসেছে বিএনপি। একদফা দাবিতে টানা এক বছর নানামুখী কর্মসূচি পালন করলেও ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন অনেকটাই নমনীয় থাকবে দলটি। হরতাল-অবরোধ ঘিরে অন্য কোনো পক্ষ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে—এ আশঙ্কা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত ও কেন্দ্রবিমুখ করাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রয়োজনে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সব স্তরের নেতাদের নিজ এলাকায় অবস্থান করে ‘একতরফা’ ভোটবিরোধী প্রচারে অংশ নিতে বলা হয়েছে।

জোর-জবরদস্তি না করলে এই নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোট পড়বে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনটি

দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভোটারবিহীন নির্বাচন হলে আন্তর্জাতিক চাপে সরকার তখন আলোচনার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চূড়ান্ত সফলতা পাবে বলে আশাবাদী দলটি। তাই নির্বাচন ব্যর্থ করতে ‘ভোট বর্জনে’ জনগণের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বিএনপি।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এই নির্বাচন দেশের মালিক জনগণের নির্বাচন নয়। এটি একটি ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন, তামাশার নির্বাচন। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি ডামি নির্বাচন করে সরকার বিদেশিদের দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। তবে এতে কোনো লাভ হবে না। এই নির্বাচনী প্রহসন জনগণ এবার প্রত্যাখ্যান করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে একতরফা-ডামি নির্বাচনে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ চলছে। এই প্রচারে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ব্যাপকভাবে ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে এই সরকার ও নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করবে।’

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট এবং চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণে গত দশ দিনে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এর মধ্যে ছিলেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী, পেশাজীবী নেতৃত্ব, জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শুভাকাঙ্ক্ষী। এ ছাড়া হাইকমান্ড দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সারা দেশের সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাদের নিয়েও বৈঠক করেন। গত এক সপ্তাহে দুদিনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভাগভিত্তিক এই বৈঠক হয়। সগত রোববার ঢাকাসহ ছয়টি সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছে।

ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তৃণমূল নেতাদের বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পাতানো এই নির্বাচনে নৌকার পাশাপাশি নানা পরিচয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন অংশ নিচ্ছে। বাকি দলগুলোও সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করছে। দেশবাসী সরকারের এ নির্বাচনী তামাশা সম্পর্কে অবগত। আন্তর্জাতিক বিশ্বও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এ অবস্থায় বিএনপি একটি গ্রহণযোগ্য-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি থেকে সরেনি। দলের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করতে হবে। জনগণ পরিবর্তন চায়। হরতাল-অবরোধে তারা ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন। সে কারণে দূরপাল্লার গাড়ি চলেনি। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে আন্দোলন ৭০ শতাংশ সফল হয়েছে। এবার চূড়ান্ত পর্যায়ে জনগণ ‘একতরফা’ ভোট বর্জন করলে আন্দোলন শতভাগ সাফল্যের বন্দরে পৌঁছবে।

বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অর্জনের কথা তুলে ধরে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বিএনপি নেতাদের একতরফা নির্বাচনে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী চাপ প্রয়োগ করা হয়। সরকারি নানা

ভয়ভীতি, প্রলোভন সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় নেতারা এমনকি জেলা পর্যায়ের নেতারাও অন্য দলে, একতরফা নির্বাচনে যাননি। এটা সাংগঠনিকভাবে বিএনপির বড় সাফল্য। এতে প্রমাণ হয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত। সামনে ভালো সময় আসবে।

বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এ সরকার আন্দোলন নস্যাৎ করতে নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার করছে। মিথ্যা-গায়েবি মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরে বসে থাকলে কেউ মাপ পাবেন না। তাই সবাই ঘর থেকে বের হয়ে আন্দোলনে অংশ নিন। জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনে তাদের ঘরে ঘরে যান।’

বৈঠকে তৃণমূল নেতাদের আশ্বস্ত করে স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, ‘সর্বোচ্চ সাংগঠনিক শক্তি ব্যবহার করে ভোটারদের ভোট বর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করুন। জনগণ একতরফা ভোট বর্জন করলে নির্বাচন হলেও সরকার এবার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। কারণ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ঘিরে তখন পশ্চিমা বিশ্বের নানামুখী পদক্ষেপ আসবে, যা এই সরকার সামাল দিতে পারবে না।’

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর চার দফায় ৫ দিন হরতাল এবং ১২ দফায় ২৩ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে বিএনপি। এরপর ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় জনগণকে ভোট বর্জনের পাশাপাশি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। তারপর থেকে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলছে।

বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘একতরফা, পাতানো, ডামি নির্বাচন বর্জন করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে সারা দেশে দুই কোটির বেশি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সরকারি

হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার এড়িয়ে যে যেভাবে পারছেন ‘ভোটবিরোধী’ জনমত গঠনে কাজ করছেন। প্রচারের অংশ হিসেবে তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, উঠান বৈঠক করছেন, মিছিল করছেন, কিছু কিছু জায়গায় মাইকিংও করছেন এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, দেয়াল ও স্থাপনায় স্টিকার লাগানো হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, গণতন্ত্রের স্বার্থে জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের ভোট বর্জন করবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোটারদের ভোটদানে নিরুৎসাহিত করতে যশোরের বাঘারপাড়ায় ধারাবাহিকভাবে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ এবং উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। মানুষের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, জনগণ একতরফা ভোট বর্জন করে এই সরকার ও নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা জানাবে।কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions