ঢাকা:- দিনদুপুরে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ছিনতাইকে সাজানো নাটক দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, আজকে ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা দিনে দুপুরে চড়-থাপ্পড় দিয়ে হাইজ্যাক করা হয়।
কি সাজানো নাটক? সবাই মিলে ভাগবাটোয়ারা করে এখন বলছে, ৯ কোটি নয়, তিন কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকা কোথায় গেল, এর জবাব দেবে কে?
শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশব্যাপি মানববন্ধনের অংশ হিসেবে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এতে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার দেশটাকে নরকে পরিণত করেছে। আজকেও পত্রিকায় ছবি আছে, বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। ছাদের রড বেরিয়ে গেছে, কংক্রিট নাই। কারা তৈরি করেছে এগুলো? দেখার দায়িত্ব কাদের? তার নীচে বসে এখনও হাজার হাজার লোক ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। সিদ্দিকবাজারে ভবন বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে গেল। ২২ জন মারা গেল। কারণ যারা দায়িত্বে আছেন তারা দেখেননি। সায়েন্সল্যাব মোড়ে ভবন উড়ে গেল, তিনজন মারা গেল। চট্টগ্রামে মানুষ মারা গেল। কে দায় নেবে?
এসব বিস্ফোরণ-দুর্ঘটনার সব দায় সরকারের জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এই দেশের মানুষকে শোষণ করা, লুট করা, বিদেশে টাকা পাচার করা। এ কথা আমার নয়। আজকে গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে বাংলাদেশের উন্নয়নের ফানুস দুর্নীতির কারণে চুপসে গেছে। এমন ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে দেশে।
বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে বক্তব্য দেন মির্জ ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারের অধীনে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। আমরা ১০ দফা দিয়েছি। সেখানে আমরা উল্লেখ করেছি, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। এই বাইরে কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মন্ত্রীরা কথায় কথায় বলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কবরস্থানে চলে গেছে। আপনারা যখন জামায়াত-জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। ১৭৩ দিন অগ্নিসন্ত্রাস করেছেন। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন। এখন সংবিধান কেটে ছিঁড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে এ কথা বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমাদের সামনে কোনো বিকল্প পথ নেই। অনেক রকমের চক্রান্ত আবার শুরু করেছে। পঞ্চগড়ে একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তারা ঘটিয়ে বিএনপির ১৮১জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এসব নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। গায়েবি মামলা দিয়ে মানুষকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
মানববন্ধন কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আজকে ঢাকা মহানগরে উত্তরা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। সারাদেশের জেলাগুলোতে মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে। এভাবে সমাবেশের পর সমাবেশ, মানববন্ধনের পর মানববন্ধন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করব।
আ.লীগ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষেরও ধৈর্য্যের সীমা আছে। আপনারা আর কতদিন মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। সমস্ত মানুষ এক হয়ে উত্তাল তরঙ্গের মতো আপনাদের ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। আপনারা পালাবার কোনো পথ খুঁজে পাবেন না।
ভারতের ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছে, সেটা বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী চুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি এই চুক্তি কোনোভাবেই বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে হতে পারে না। এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে বিএনপির মহাসচিব আগামী ১৮ মার্চ শনিবার সারাদেশের সকল মহানগরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। পরিচালনা করেন মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। দুপুর ১২টায় মানববন্ধন শেষ করা হয়।