ডেস্ক রির্পোট:- ইরান তার বেশ কয়েকটি তেলের ট্যাঙ্কার পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় তেল রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে পুনরায় নিয়ে গেছে। এগুলো গত সপ্তাহে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ইরান মনে করছে, ইসরায়েল তাদের গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রগুলোতে হামলা চালাবে না। এরই মধ্যে ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাঙ্কার কোম্পানি বা এনআইটিসির দুটি ভেএলসিসি সুপার ট্যাঙ্কার খারগ দ্বীপে তেল ভরার কাজ শুরু করেছে। এ দ্বীপে রয়েছে ইরানের বৃহত্তম বন্দর, যেখান থেকে ৯০ শতাংশ তেল রপ্তানি করে ইরান।
গতকাল বুধবার মিডলইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তেহরানে হামাসের শীর্ষ নেতা ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যাসহ বেশ কয়েকজন কমান্ডার নিহতের ঘটনায় গত সপ্তাহে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। তারা ১৮০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে ছোড়ে। জবাবে পাল্টা হামলার হুমকি দেয় ইসরায়েল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর ছড়ায়, ইরানের তেলক্ষেত্র ও পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যে পরিণত করা হতে পারে।
এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের তেলের স্থাপনায় হামলার বিষয়ে আলোচনা করছে। অবশ্য পরে তিনি তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি ইসরায়েলের জায়গায় হলে তেলক্ষেত্রে হামলার বিকল্প নিয়ে ভাবতেন। ট্যাঙ্কার ট্র্যাকার ডটকমের প্রধান নির্বাহী সমির মাদানি বলেন, খারগ দ্বীপে এনআইটিসির ট্যাঙ্কারগুলোকে পুনরায় পাঠানোর মানে হচ্ছে ইরান নিজেকে ‘ঝুঁকি মুক্ত’ মনে করছে।
গত রোববার খারগ দ্বীপ পরিদর্শনকালে ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শত্রুরা যে একটি সংকট তৈরি করবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। এ দ্বীপে আসাটা স্বাভাবিক ঘটনা।’ ইরান লেবাননে তাদের সমর্থিত সংগঠন হিজবুল্লাহর সামর্থ্যকে বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
ইসরায়েল যে তেলক্ষেত্র ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার হুমকি দিচ্ছে, তা নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছে ইরান। ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) জেনারেল রসুল সানাইরাদ মঙ্গলবার বলেছেন, তেলক্ষেত্র ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হবে ‘সর্বোচ্চ সীমা লঙ্ঘন’। এর আগে গত এপ্রিলে ক্ষতির মুখে পড়লে হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকিও দেয় ইরান। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি জায়নবাদী শাসকগোষ্ঠীর উচিত হবে না ইরানের অঙ্গীকারের পরীক্ষা নেওয়া। যদি দেশের ওপর কোনো আঘাত আসে, তাহলে এর জবাব হবে আরও ভয়ংকর।
এ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইসরায়েলের হামলা যেন ছোট পরিসরে হয়। কিছুসংখ্যক মার্কিন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইসরায়েলকে বড় হামলা থেকে বিরত থাকতে বলছেন। উদাহরণ হিসেবে লেবাননের পেজার ও ওয়াকিটকি হামলার প্রসঙ্গও এনেছেন কেউ কেউ।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, তেল আবিব ও তেহরানের উত্তেজনার মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বুধবার সৌদি আরব সফর করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংঘাত ঠেকাতেই তিনি এ সফর করেন। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্টের ওয়াশিংটন সফর করার কথা ছিল। সেখানে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। কী কারণে তা স্থগিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছু জানায়নি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস। বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে নেতানিয়াহু প্রশাসনের দূরত্বের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে।
গাজায় আরও ৪৫ জন নিহত
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বুধবার এক দিনে আরও ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩০ জন। হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, ইসরায়েলের হামলার জেরে গাজায় অন্তত সাতটি স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্র খালি করেছেন তারা। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ব্যাপক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সেনারা মেইস আল-জাবাল এলাকায় অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সেখানে তীব্র লড়াই চলছে। পাশাপাশি ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ। এতে অন্তত দুই ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।