সবুজ পাহাড়ে জুমের ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত জুমিয়ারা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ দেখা হয়েছে

বান্দরবান :- পার্বত্য চট্টগ্রামে উচুনিচু পাহাড়ি জমিতে জুমের ধানের সাথে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, তিল, মরিচ, মার্ফা, কুমড়া, আদা, হলুদ,সবজি চাষ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে করা পাহাড়িদের এই চাষপদ্ধতি ‘জুমচাষ’ নামে পরিচিত।

বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস। প্রধানত জুমচাষ থেকে পাওয়া ধান, ভুট্টাসহ সাথী ফসলে সারাবছরের চাহিদা মিটিয়ে থাকেন তারা। এবার ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। আগামী এক বছরে তাদের পরিবার কীভাবে চলবে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাবেন কী করে, সে চিন্তায় জুমচাষিদের চোখে ঘুম নেই। তবে জুমের উদপাদিত সোনালী ফসলে ৬ মাস নির্ভর করে বাকি ৬ মাস আগামী বছরে আসন্ন ধানের উপর ঋণ নিয়ে চলে পাহাড়ের হাজারো জুমিয়া পরিবার।

থানচি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষায় লিক্রি, মেনহাত, বুলু, তাংখোয়াই, পান ঝিড়িসহ আশপাশ এলাকায় দেখা যায়, পাহাড়ে উঁচু জমিতে ধান, তিল, ভুট্টা, মরিচ, শাকসবজি, ফল, কুমড়াসহ নানা জাতের ফসলের চাষ করেছেন জুমিয়ারা। ধান পেলেও সাথী ফসল মরিচ, ভূটা, তিল, কুমড়া, মার্ফা কোনটা ফলন হয় নি।

তবে জুমচাষিরা বলেন, এবার বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ, আষাড় মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফসল ভালো হয়নি। খরা ও রোদে চোখের সামনে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল ঝলসে গেছে কিন্তু সেচের সুযোগ নেই। ফলে ধানে চিটা বেশি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মোট ২ হাজার ৪১৩ হেক্টর পাহাড়ি উচু নিচু জমিতে ২ হাজার ৬৫৭ জন কৃষক জুম চাষ করেছে। চলতি বছরে ৩ হাজার ০১০ মেট্রিক টন (ধান) উদপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দেখানো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানান পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা জুমের ফসল সংগ্রহের কাজ করবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত।

রেমাক্রী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বুলু ম্রোপাড়ার বাসিন্দা সিংক্লান ম্রো পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবা, ছেলেমেয়েসহ আটজন সদস্য রয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাহাড়ি জমিতে ১৩ হাঁড়ি (১ হাঁড়ি ১০ কেজি) বীজধান রোপণ করে ৫০০ হাঁড়ি ধান পান। এ ছাড়া মিষ্টিকুমড়া, জুমকুমড়া, তিল, ভুট্টা, মরিচ, ফল (মারফা) বিক্রি করে ভালো লাভ হয়েছে। পরিবারের ভরণপোষণে অসুবিধা হয়নি।

কলম ম্রো বলেন, চলতি বছরে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ী জমিতে ১২ হাঁড়ি ধান লাগানোর হয়; কিন্তু প্রয়োজন সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ও প্রখর রোদে ধানসহ অন্য ফসল মরে গেছে। বৃষ্টি না হলে ১০০ হাঁড়ি ধান পাবেন কি না সন্দেহ করছেন। তার মতো, মেনহাত পাড়ার ২০ পরিবার, তাংখোয়াই পাড়ার ১৮ পরিবার, পান ঝিড়ি পাড়াসহ প্রায় ৩০ টি পাড়া একই পরিণতি হবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দাশ গুপ্ত বলেন, চলতি বছরে ২৫০ জন কৃষক পরিবারের মাঝে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রণোদনার বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির জন্য প্রায় ২০ পরিবারকে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে সহযোগিতা করা হয়েছে। তাঁদের ফসল খুবই ভালো হয়েছে এবং তাঁরা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবেন।

থানচি সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাইথাং ম্রো পাড়ার বাসিন্দা রেংক্লান ম্রো ৬০ বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের আমরা চিনি না, জানি না। যোগাযোগ ভালো হলেও তাঁরা আমাদের পাড়ায় কোনো দিন আসেন না। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে না দেওয়ায় আমাদের ওয়ার্ডের ৭-৮টি পাড়ার লোকজন কৃষি বিভাগের কোনো সুবিধা পায়নি ।

উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় বক্তব্য নেয়ার সম্ভব হয়নি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions