হারি বৈসু মধ্যদিয়ে ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসব শুরু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৪০ দেখা হয়েছে
oplus_1024

খাগড়াছড়ি:- খাগড়াছড়িতে বৈসু উপলক্ষে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৃহৎ সামাজিক উৎসব ঐতিহ্যবাহী “তৈবুকমা-অ- খুম বকনাই, বাই রি কাতাল কাসক-রনাই” যার বাংলা অর্থ ”মা গঙ্গার প্রতি পুষ্প অর্পণ ও নতুন কাপড় নিবেদনের মধ্যদিয়েই “হারি বৈসু” উদযাপিত হয়েছে। এতে প্রতিপাদ্যের বিষয় ছিল” চিনি হুকুমু,চিনি সিনিমুং”যার বাংলা অর্থ “আমাদের সংস্কৃতি,আমাদের পরিচয়”।

এ উপলক্ষে পাহাড়ের সমগ্র ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী নদীতে ফুল বাহারি রঙ্গের ফুল দিয়ে,প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ছোট বাচ্চাদের হাতের তৈরি নতুন রিনাই,রিসা(থামি-খাদি) ও কাপড় ভাসিয়ে ত্রিপুরাদের নিজস্ব রীতি অনুযায়ী ‘হারি বৈসু’র উদযাপন করা হয়।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে খাগড়াছড়ির পল্টনজয় পাড়াস্থ চেঙ্গী নদী,খাগড়াপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের তরুণ- তরুণী,বৃদ্ধা-বনিতারা গঙ্গাদেবীকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা এবং ছোট বাচ্চাদের হাতে বুনা ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী নতুন কাপড় নদীতে ভাসিয়ে দেন। এতে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রদীপ জ্বালিয়ে,নদীতে পুষ্প অর্পণ ও নদীতে নতুন তৈরির কাপড় ভাসিয়ে হারি বৈসু’র উদ্বোধন করেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা,এমপি’র সহ-ধর্মীনি মল্লিকা ত্রিপুরা।

এ দিন হারি ভোরবেলায় ফুলগাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং এই ফুলে একাংশ দিয়ে পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয় এবং ফুলের আরেক এক অংশ দিয়ে নদীর তীরে ,মন্দিরে এবং পবিত্র স্থানে ফুল, ধুপ এবং দীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে জাতি,সমাজ, দেশ ও বিশ্বের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করা হয়।

পরে ত্রিপুরা তরুণ -তরুণী,বৃদ্ধ-বনিতারা নেচে -গেয়ে এ উৎসবটি পালন করেন। হাসি আনন্দে মেতে উঠেন ত্রিপুরা তরুণ তরুণীরা।

উল্লেখ্য যে,ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান উৎসব বৈসু। প্রথম দিনকে বলা হয় হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিনকে বৈসুমা/বৈসুকমা এবং তৃতীয় বা শেষ দিনটিকে বলা হয় বিসি কতাল। মূলত আগামী দিনের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হয়। তিনদিন ব্যাপী এই বৈসুর প্রথম দিন হারি বৈসু।

বৈসু: বৈসু আমাদের ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রধান সামাজিক উৎসব। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শেষ দুইদিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন এই তিন দিনব্যাপী এ উৎসব পালন করা হয়। আমরা বৈসুর প্রথম দিনকে বলি হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিনকে বৈসুমা এবং তৃতীয় বর্ষশেষ দিনটিকে বলা হয় বিসি কাতাল। ত্রিপুরারা মূলত আগামী দিনের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা হয়।

হারি বৈসু: হারি বৈসুর দিনে ভোরবেলায় ফুলগাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং এই ফুলে একাংশ দিয়ে পুরো বাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হয় এবং ফুলের আর এক অংশ দিয়ে নদীর তীরে ,মন্দিরে এবং পবিত্র স্থানে ফুল, ধুপ এবং দীপ জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে।

বৈসুমা : বৈসুমা হচ্ছে দ্বিতীয় দিন এবং এইদিনে মূলত খাদ্য উৎসব করা হয়। এই দিনে মানুষ একজন আর একজনের বাসায় ঘুরে দেখা সাক্ষাৎকার করে। বৈসুমা দিনের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে মিক্স সবজি যেটাকে “গন্তক ” বলে ককবরক ভাষায়,আবার অনেকে বলে থাকে “লাবড়া” নামে। এই গন্তক তৈরির জন্য প্রায় ১০১-১০৭ধরনের সবজি দেয়া হয়। পাশাপাশি ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলোর পাশাপাশি সেমাই পায়েস, নুডলস সহ অনেক খাবার আইটেম থাকে |

বিসিকাতাল: তৃতীয় দিন হচ্ছে বিসিকাতাল। এই দিনে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। পরিবারের ছোটরা বড়দের পানি দিয়ে পা ধুয়ে প্রণাম করে। নতুন বছরে সবার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

বৈসুর সময় ত্রিপুরারা/ত্রিপুরিরা নিজেদের ঐতিহবাহী খেলা সুকুই ( গিলা) , ওয়াকরাই, চপ্রিং, কাংটি/কাং ইত্যাদি খেলা খেলে থাকে এবং পাশাপাশি ঐতিহবাহী গরয়া নৃত্য পরিবেশন করে।নতুন বছরের মঙ্গলের জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে “কমা বতই(এক ধরনের পবিত্র পানি ছিটানো হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions