ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ বহু জাতি, ভাষা, ধর্ম ও মতের বহুত্ববাদী রাষ্ট্র। এখানে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে বাংলা যেমন প্রচলিত, তেমনি আদিবাসী জাতির ভাষা হিসেবে চাকমা, মারমা, ম্রো ও সাঁওতালসহ অনেকগুলো ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে।
তবে চর্চার অভাব, সাহিত্য রচনা না হওয়া, লেখার ভাষা না থাকাসহ নানা কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ভাষাগুলো। সেগুলোকে টিকিয়ে রাখতেই বইমেলায় চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও ম্রো ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশ করেছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী।
এ বছর বইমেলায় ‘চাকমা ভাষায় রূপকথা’, ‘ম্রো ভাষায় রূপকথা’, ‘সাঁওতাল ভাষায় রূপকথা’ এবং ‘মারমা ভাষায় রূপকথা’ শিরোনামে চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোতে বিভিন্ন গল্পকে ওই ভাষা ও বাংলায় অনূদিত করা হয়েছে।
ম্রো ভাষায় রূপকথা বইতে ‘নিজ ভূমে পরবাসী’, ‘রাক্ষস’, ‘তারা কন্যা’, ‘সম্পামালা’, ‘ভাল্লুক ও শিয়াল’সহ বিভিন্ন গল্প ম্রো ও বাংলা উভয় ভাষায় লেখা হয়েছে।
মারমা ভাষায় রূপকথা বইতে ‘বাঘিনী ও গরুর গল্প’, ‘বাঘ ও শেয়ালের দাওয়াত খাওয়া’, ‘লেবু কন্যা’, ‘কাক ও বকের গল্প’ মারমা ও বাংলা ভাষায় স্থান পেয়েছে।
যেভাবে এলো সাঁওতাল গোত্রের নাম পদবি, ঘোড়া ও কুকুর, বড় রাণী ছোট রাণী, বহুরূপী বাঘ, ফুলকাবতি, ভালো কাজের খোঁজে গল্পগুলি সাঁওতালি ও বাংলা ভাষায় লেখা হয়েছে। একইভাবে লেখা হয়েছে চাকমা ভাষায় রূকথা বইটি।
বইগুলো প্রকাশ সম্পর্কে ভূমিকায় বিদ্যানন্দের পরিচালক ও বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর সম্পাদক কিশোর কুমার দাস বলেন, পাহাড়ে বিদ্যানন্দ অনাথালয়ের শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষা ভুলতে বসেছে। যে দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সে দেশের মানুষ মাতৃভাষা পড়তে এবং লিখতে সুযোগ পাচ্ছে না দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি প্রতিটা শিশুই যেন স্পর্শ করতে পারে এবং অনুভব করতে পারে মা-বাবার মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দের অক্ষরগুলো কেমন।
কিশোর কুমার দাস আরও বলেন, বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো সংরক্ষণের জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা। আমাদের উদ্যোগ সমাজের কর্তা ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত করবে, এই আমাদের কামনা।
তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেও আমরা এই ভাষাভাষী লেখক খুঁজে পাইনি। তাই সাধারণ মানুষ এবং শিশুদের কাছ থেকে শোনা গল্পগুলোকে নিয়েই বইগুলো সাজিয়েছি।
এর আগে ২০১৮ সালে ইয়াঙ্গান ম্রোর লেখা ‘ম্রো রূপকথা’ ও ২০২০ সালে ‘ম্রো রূপকথা-২’ প্রকাশ করে বিদ্যানন্দ।