
ডেস্ক রির্পোট:- চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে দেয়ার চুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে বিভক্ত রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বিভক্ত এই রায় হয়। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রিট আবেদন (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম ও কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন। রায়ের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, নিয়ম অনুসারে এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি ভিন্ন বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পাঠাবেন। সেখানে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। চুক্তি প্রক্রিয়ার চলমান কার্যক্রম চালাতে আইনি কোনো বাধা নেই। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, চুক্তির বৈধতা প্রশ্নে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুল অ্যাবসোলিউট করেছেন, অপর বিচারপতি তিনটি প্রশ্নে খারিজ করেছেন। এরপর এই জাজমেন্ট মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি তৃতীয় একটি বেঞ্চ করে দেবেন। সেখানে এ ব্যাপারে দেয়া রায় চূড়ান্ত হবে।
নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০শে জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। এর ধারাবাহিকতায় এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়ায় স্থিতাবস্থা চেয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আবেদনের শুনানিতে ১৩ই নভেম্বর হাইকোর্ট রুল শুনানির জন্য ১৯শে নভেম্বর দিন রাখেন। রুলের ওপর ১৯, ২০ ও ২৫শে নভেম্বর শুনানি হয়।
নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন চলতি বছর রিট করেন। রুলে দেশি অপারেটরদের (প্রতিষ্ঠান) অনুমতি না দিয়ে পিপিপি আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ই জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক। চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কন্টেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।