শিরোনাম
রাঙ্গামাটির কাউখালিতে দিনব্যাপী সম্প্রীতি ফুটবল টুর্ণামেন্টে চ্যাম্পিয়ন সোনাইছড়ি একাদশ চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৬ নিলামে উঠছে সাবেক ২৪ এমপির গাড়ি ভারতের জন্য ট্রাম্প ২.০ এর আশার সম্ভাবনা কি স্তিমিত ? পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের চাঁদার দাবিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন লাখো মানুষ নিজেকে বদলানোর প্রথম সোপান হলো খেলাধুলা: জেলা প্রশাসক আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে বিএনপির ভাবমুর্তি যারা ক্ষুন্ন করছে তাদের রেহাই দেওয়া হবেনা -মামুনুর রশিদ মামুন রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা: আরও এক আসামি গ্রেপ্তার চট্টগ্রামে খাবারে কেমিক্যাল ব্যবহার, কাচ্চি ডাইনকে লাখ টাকা জরিমানা খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ভারতীয় চিনি জব্দ, আটক ২

ভারতের জন্য ট্রাম্প ২.০ এর আশার সম্ভাবনা কি স্তিমিত ?

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গত ২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণা হতেই বাকি দুনিয়ায় যে দেশটি সবচেয়ে বেশি উল্লাসে ফেটে পড়েছিল, তা নিঃসন্দেহে ভারত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উচ্ছ্বসিত অভিবাদন জানাতে ও নতুন অংশীদারির অঙ্গীকার করতে এতটুকুও দেরি করেননি।তার ঠিক আড়াই মাস পর ডোনাল্ড ট্রাম্প রীতিমাফিক আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন, চার বছরের ব্যবধানে আবার তার ঠিকানা হয়েছে হোয়াইট হাউস।

‘মাগা’, অর্থাৎ ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ থিমের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে তার দ্বিতীয় অভিষেক।কিন্তু ট্রাম্পের বিজয়ের পর দিল্লিতে যে ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল এবং বিশেষ করে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো ভারত-মার্কিন সমীকরণের যে নতুন সম্ভাবনায় বুক বাঁধছিলেন তা এখন অনেকটাই স্তিমিত।বরং আগামী দিনে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতার অলিন্দে আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মেঘ ক্রমশ ঘনিয়ে উঠেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখা যায়নি, সেখানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সরাসরি মোদীকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কি না, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে।নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে ‘পার্সোনাল কেমিস্ট্রি’ নিয়ে ভারতের মিডিয়াতে গত কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণ নিউজপ্রিন্ট আর এয়ারটাইম খরচ হয়েছে, এরপর আম ভারতীয়দের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা তো বটেই!

বস্তুত ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়েন, তার আগের কয়েক মাসে নরেন্দ্র মোদীই একমাত্র বিশ্বনেতা, যার সঙ্গে তিনি দু’দুটো প্রকাশ্য জনসভায় অংশ নেন। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী তো ট্রাম্পের হাত ধরে ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিতেও দ্বিধা করেননি।

ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিদেশি কোনো নেতার হয়ে নির্বাচনি জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, সেটাও ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা।আর তার ঠিক মাসপাঁচেকের মধ্যেই গুজরাটের আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী নিজের নামাঙ্কিত স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শকের সামনে সংবর্ধনা জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে।এছাড়া আরও বহুবার নরেন্দ্র মোদীর বিখ্যাত ‘হাগ’ বা ‘আলিঙ্গন কূটনীতি’রও স্বাদ পেয়েছেন ট্রাম্প।

কিন্তু দুই নেতার মধ্যে তখন যে ধরনের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব ও মাখামাখি চোখে পড়ত – গত কয়েক মাসে কিন্তু তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। সেপ্টেম্বরে নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরেও দু’জনের দেখা হয়নি।নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী তাকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এরপর আর দু’জনের মধ্যে সরাসরি কথাবার্তা হয়েছে বলেও কোনো প্রমাণ নেই।

আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক জোট ‘কোয়াডে’র পরবর্তী সামিট বা শীর্ষ সম্মেলন এই বছরেই ভারতে হওয়ার কথা – কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাতে আসবেন কি না, সেটাও এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।ঠিক কোন কোন কারণে ট্রাম্প ২.০ বা দ্বিতীয় ট্রাম্প জমানাকে ঘিরে ভারতে কিছুটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে – এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের আশান্বিত হওয়ার কারণ আছে – এই প্রতিবেদনে সেটাই খতিয়ে দেখা হয়েছে।

ট্যারিফ যুদ্ধ? তেলে স্যাংশন?
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তার প্রশাসন চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে ‘ট্যারিফ’ বা আমদানি শুল্ক বসানোর কথা বিবেচনা করছে।’ট্যারিফ’ আসলে তার অতি প্রিয় একটি বাণিজ্যিক হাতিয়ার।
আমেরিকায় বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা কমাতে এবং বিশ্বের অন্যান্য বাজারে মার্কিন পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে তিনি যে এই অস্ত্রটি প্রয়োগ করতে কোনো দ্বিধা করবেন না, সেই হুমকি তিনি বহুদিন ধরেই দিয়ে আসছেন। আর এই ‘ট্যারিফ যুদ্ধে’ ভারতও প্রবলভাবেই তার নিশানায় আছে, যাদের তিনি একদা ‘ট্যারিফ কিং’ বা ‘শুল্ক বসানোর রাজা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন।ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তি ছিল, ভারতের মতো এত চড়া হারে আমদানি শুল্ক প্রায় কোনো দেশই বসায় না, অথচ তারা আশা করে ভারতে তৈরি জিনিসপত্র খুব কম ট্যারিফে আমেরিকার বাজারে বিক্রি করতে পারবে!

ভারতকে ইতিমধ্যেই বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির (ট্রেড ডেফিজিট) সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে। আমেরিকা বিশ্বে ভারতের সব চেয়ে বড় বাজার, সেখানে চড়া হারে শুল্ক বসানো হলে সেই ঘাটতি যেমন বাড়বে, ভারতের প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিতভাবেই ব্যহত হবে।দিল্লিতে অর্থনীতির সুপরিচিত বিশ্লেষক ও লেখক স্বামীনাথন আইয়ারের কথায়, “এটা তো পরিষ্কার যে আমেরিকাকে গ্রেট বানানোই তার লক্ষ্য, ভারতকে নয়!”
“কাজেই ভারত যদি তাদের নিজেদের চড়া শুল্ক না কমায়, আমেরিকায় বাজারেও ভারতের ওপর বিরাট ট্যারিফ বসানোটা একরকম অবধারিত। আমি নিশ্চিত ট্রাম্প এক্ষেত্রে অন্তত ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন না।”স্বামীনাথন আইয়ার সেই সঙ্গেই আশঙ্কা করছেন, ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞাও আমেরিকার আমলে আরও কঠোর করা হবে।এটাও ভারতের জন্য কোনো সুখবর নয়, কারণ গত কয়েক বছর ধরে ওই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ভারত যেভাবে রাশিয়া ও ইরান থেকে শস্তায় তেল কিনে আসছে, সেটাও এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়বে, বলছিলেন স্বামীনাথন আইয়ার।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত তিন বছরের মধ্যে রাশিয়া ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে, রাশিয়া থেকে ক্রুড বা অপরিশোধিত তেল আমদানি করে সেই তেল ভারতে রিফাইন করে ইউরোপে রফতানি পর্যন্ত করা হচ্ছে।ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পেট্রল বা ডিজেলের দাম স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে রাশিয়া থেকে শস্তায় তেল পাওয়া যাচ্ছে বলেই।

ভিসা ছাঁটাই, ডিপোর্টেশন
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণাতেও বলেছিলেন, আমেরিকার কোম্পানিগুলো যাতে বিদেশ থেকে এনে কর্মী নিয়োগ না করে আমেরিকার বাসিন্দাদেরই চাকরি দেয় সেই লক্ষ্যে তিনি এইচ- ওয়ানবি ভিসার সংখ্যায় ব্যাপক ছাঁটাই করবেন।এইচ – ওয়ানবি হলো এক বিশেষ ধরনের নন-ইমিগ্র্যান্ট মার্কিন ভিসা, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো আধুনিক বিশেষায়িত প্রযুক্তি বা তাত্ত্বিক ক্ষেত্রে বিদেশি কর্মীদের সাময়িকভাবে নিয়োগ করতে পারে।

বিগত কয়েক দশকে লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিক এই ভিসার সুবাদেই আমেরিকায় প্রবেশের ছাড়পত্র পেয়েছেন। তাদের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিওরিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) মতো বিভিন্ন খাতে আজ কর্মরত বা সুপ্রতিষ্ঠিত।ট্রাম্প জমানায় শুধু এই ধরনের বিদেশি কর্মীদের সংখ্যাই কমানো হবে না, এইচ- ওয়ানবিতে আসা বাবা-মায়ের আমেরিকায় জন্মানো সন্তানও মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার হারাবে বলে প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার (২১শে জানুয়ারি) একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।

এ ছাড়া প্রতি বছর যে হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মার্কিন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে যান, তাদের ভিসার সংখ্যাও কমানো হবে বলে জানানো হয়েছে।সোজা কথায়, ভারতীয় নাগরিকরা যাতে আমেরিকায় পাড়ি দিতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে বলে ইতিমধ্যেই মধ্যেই বুঝিয়ে দিয়েছে।

উপরন্তু, মার্কিন সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স গত সপ্তাহেই একটি বিল এনেছেন, যাতে এইচ- ওয়ানবি ভিসা আবেদনের ফি দ্বিগুণ করার এবং এই কর্মীদের ন্যূনতম বেতনের সীমা অনেক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।তিনি যুক্তি দিচ্ছেন, “আমেরিকায় একজন কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারকে ১,১০,০০০ ডলার মাইনে দিয়ে রাখতে হবে – অথচ সেই জায়গায় এইচ – ওয়ানবিতে একজন বিদেশি কর্মীকে ৬৫,০০০ ডলার বেতন দিলেই চলবে।”

“মার্কিন হাইটেক কোম্পানিগুলোর ধনকুবের মালিকদের এই এইচ – ওয়ানবি প্রোগ্রাম কেন এত পছন্দ তা বোঝা শক্ত নয়, কারণ তারা এতে মার্কিন নাগরিকদের মাইনে ‘আন্ডারকাট’ করতে পারছে!”ফলে ট্রাম্প জমানায় ভারতীয়দের জন্য এইচ-ওয়ানবি-র দরজা অচিরেই আরও কঠিন হয়ে যাবে, এই শঙ্কা আছে ষোলো আনা।ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইলন মাস্ক, যিনি নিজে এককালে এই ক্যাটাগরির ভিসাধারী ছিলেন, তিনিও এই প্রোগ্রাম বন্ধ করার পক্ষপাতী নন। বরং এটিকে আরও সংস্কার করে দুনিয়ার সেরা প্রতিভাদের আমেরিকায় আকৃষ্ট করার ওপর জোর দিচ্ছেন।এছাড়াও সঠিক কাগজপত্র ছাড়াই আমেরিকায় গিয়ে পৌঁছনো কয়েক লাখ ভারতীয়র ভবিষ্যতও এখন অনিশ্চয়তায় ঘেরা।

২০২৪ সালে পিউ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আমেরিকায় ‘আনডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্ট’ বা কাগজপত্রবিহীন বিদেশি অভিবাসীদের মধ্যে ভারতীয়দের সংখ্যা ৭,২৫,০০০। ভারতীয় জনগোষ্ঠী হলো এখানে তৃতীয় বৃহত্তম – মেক্সিকো আর এল সালভাদোরের পরেই!অভিবাসনের প্রশ্নে অনেক শিথিল মনোভাব দেখানো বাইডেন জমানাতেও ২০২৪ সালে দেড় হাজারের মতো ভারতীয়কে আমেরিকা থেকে ডিপোর্ট করা হয়েছিল।এখন ট্রাম্পের আমলে এই ডিপোর্টেশনের সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়বে, যা দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে।

আইনি অস্বস্তির জায়গাগুলো
গত বছর প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে নিউ ইয়র্কে একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে (গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু) হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ভারতের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে চার্জ গঠন করা হয়, তা দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে রীতিমতো অস্বস্তি ডেকে এনেছিল।মার্কিন আদালতে সেই মামলা এখনও চলছে।আমেরিকায় ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুশান্ত সিং বলছেন, এই মামলার ব্যাপারে আমেরিকাকে যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছে তাদের ‘ফাইভ আইজ’ শরিক কানাডা।আর কানাডার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

অধ্যাপক সিং আরও জানাচ্ছেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী ইকোসিস্টেমে অনেকেরই ধারণা ছিল ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে একটা ‘ডিল’ বা গোপন সমঝোতা সেরে ফেলবে এবং এই আইনি মামলা থেকে দিল্লিকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।”ভারতে কৃষক আন্দোলনের সময় তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের নিন্দা করেছিলেন মিস ধিলোঁ। কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর খুন হওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যেই মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।”

“নতুন পদে নিয়োগ পাওয়ার পর হরমিত ধিলোঁ তার এই কঠোর অবস্থান ত্যাগ করবেন বলে মনে হয় না,” বলছিলেন অধ্যাপক সুশান্ত সিং।আমেরিকায় চলমান আর একটি যে মামলা নিয়ে ভারতে তুমুল আগ্রহ আছে, তা হলো ভারতীয় শিল্পপতি ও ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মামলা। গৌতম আদানিকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলেই গণ্য করা হয়।

ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে লাগাতার আক্রমণ করে আসছেন, যার জবাব দিতে মুখ খুলতে হয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকেও।এমনকি “মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত” – আদানি বিতর্কের সূত্র ধরে বিজেপি প্রকাশ্যে এই ধরনের অভিযোগ করতেও পিছপা হয়নি।

বাংলাদেশ ইস্যুতে ‘নাক গলানো’ কমবে?
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে যে প্রসঙ্গটি দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বার বার প্রকাশ্য বিরোধের কারণ হয়েছে – তা হলো বাংলাদেশ।শেখ হাসিনার আমলকে দিল্লি আগাগোড়া ‘স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল’ বাংলাদেশ বলে বর্ণনা করে এসেছে, যে মূল্যায়নের সঙ্গে আমেরিকা কখনওই একমত ছিল না।বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবক্ষয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে – আর তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধ সামনেও এসেছে বহুবার।
গত অগাস্টে ঢাকায় নাটকীয়ভাবে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই বিরোধ তুঙ্গে পৌঁছেছিল যথারীতি।তবে ভারত এখন আশা করছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার ‘অতি সক্রিয়তা’ অনেকটাই কমে আসবে। কারণ সুদূর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট দেশে কী ঘটছে না ঘটছে তা নিয়ে নতুন প্রশাসন হয়তো তেমন মাথা ঘামাবে না।ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে দিল্লিতে বলেছিলেন, “এখন আমরা সবাই সম্ভবত এক নতুন যুগের সম্মুখীন হতে যাচ্ছি।

সম্পর্ক তাহলে কোন পথে?
চার দিনের ব্যস্ত ওয়াশিংটনের সফর সেরে বুধবার দেশে ফেরার আগে মি. জয়শঙ্করকে ভারতীয় একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে একেবারে সামনের সারিতে, প্রায় ট্রাম্পের মুখোমুখি আসনটা তিনি পেলেন কীভাবে?জয়শঙ্কর জবাব দেন, “অনুষ্ঠানে যিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিশেষ প্রতিনিধি, তিনি যে এটুকু খাতিরদারি পাবেন এটাই কি স্বাভাবিক নয়?”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, মোদী আর ট্রাম্পের ‘ব্যক্তিগত রসায়ন’ আর সৌহার্দ্যপূর্ণ সমীকরণকে তারা এবারও খুব বড় করে দেখাতে চাইছেন, যার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও পড়বে বলে ভারত বোঝাতে চাইছে।নতুন মার্কিন প্রশাসনে যে ‘একটা উদ্দীপনা ও প্রাণশক্তির ছাপ’ দেখা যাচ্ছে, তারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মি জয়শঙ্কর। মোদী ৩.০ যে ট্রাম্প ২.০-র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য ‘মুখিয়ে আছে’, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও পররাষ্ট্রনীতির পর্যবেক্ষক প্রভু চাওলা অবশ্য বিষয়টাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে চান।”আমি মনে করি না পার্সোনাল কেমিস্ট্রির এখানে তেমন কোনো ভূমিকা থাকবে। ট্রাম্প আসলে ভারতকে বলতে চাইছেন আমেরিকার সঙ্গে তোমরা ডিল করো অন্য দেশের সঙ্গে তোমাদের কী সম্পর্ক সেটা ভুলে গিয়ে – নইলে পরিণাম ভোগার জন্য প্রস্তুত থাকো।” এখন যদি ভারত দক্ষ কূটনীতির মাধ্যমে এই কঠিন ভারসাম্যের খেলা দেখাতে পারে, তাহলে ভাল। তবে ভারত কতটা এই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে আমি নিশ্চিত নই!, বলছেন প্রভু চাওলা।

এই প্রসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে মি চাওলা আরও বলছিলেন, নির্বাচনে জেতার দু’সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিকস দেশগুলোকে মি ট্রাম্প হুমকি দেন – তারা যদি ডলারের বদলে একটি ‘ব্রিকস কারেন্সি’কে তুলে ধরার চেষ্টা করে তাহলে তিনি ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোতে ১০০ শতাংশ ট্যারিফ বসাবেন।

ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অন্য সদস্য দেশগুলো এই হুঁশিয়ারি নিয়ে বিশেষ কিছু না বললেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মন্তব্য করেন, ভারত কখনোই বিশ্ব অর্থনীতিকে ডলার-মুক্ত করার পক্ষে নয় এবং এই মুহূর্তে একটি ‘ব্রিকস কারেন্সি’ চালু করার কোনো প্রস্তাবও নেই! “কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, তারা ভারতীয় নাম বা পেডিগ্রির অধিকারী হতে পারেন, কিন্তু তারা সবার আগে নির্ভেজাল ও আপসহীন আমেরিকান!”, মন্তব্য চাওলার।

ফলে সব মিলিয়ে তার পর্যবেক্ষণ হলো, ‘আমেরিকার দাবি সবার আগে’ – ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতির সঙ্গে ভারত তাদের নিজস্ব স্বার্থ ও অগ্রাধিকারের ভারসাম্য রেখে যতটা চলতে পারবে – দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথও সেভাবেই নিরূপিত হবে।প্রভু চাওলার কথায়, “মোটের ওপর বাইডেন ২০২১-২৪ ছিল ভারতের জন্য একটা নো-উইন-নো-লস পর্ব, মানে লাভক্ষতি তেমন কিছু হয়নি।”

“কিন্তু ট্রাম্প ২০২৫-২৮ হতে যাচ্ছে ‘ডুয়েল টাইম’, মানে মুখোমুখি দ্বৈরথের সময় – যেখানে হারজিত একরকম অবধারিত!” তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions