১১ হাজার কোটি টাকায় নতুন কালুরঘাট সেতু

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪
  • ২০৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কালুরঘাট পয়েন্টে ‘কনস্ট্রাকশন অব রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ অ্যাক্রোশ দ্য রিভার কর্ণফুলী’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়ন করবে।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, সেতু নির্মাণে মোট প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এরমধ্যে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা ৮ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের জয়দেবপুর ইশ্বরদী রেল প্রকল্প ও কালুরঘাটে নির্মিতব্য রেলওয়ের নতুন সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা আজাদীকে বলেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের সাথে আজকে (গতকাল) ৮১ কোটি ৪৯ লাখ ১০ হাজার ডলার ঋণচুক্তি (বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ২শ’ কোটি টাকা) স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা জিওবি ফান্ড থেকে ব্যয় হবে।

প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ পরিশোধ করা হবে ৪০ বছরে। প্রতি বছর ২শ; কোটি টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের পর প্রকল্পটি একনেকে উঠবে জানিয়ে প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, একনেকে অনুমোদনের এরপর পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে এবং ডিজাইন হবে। তারপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হবে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে। সেতুর মূল কাজ শুরু হবে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে দুটি ঋণচুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে চেয়ারম্যান ও সিইও ইয়ুন হি সুং চুক্তি দুটিতে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান এন্ড সিও মি. উন শি চুং ঋণচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং–সিক, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিবসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই প্রকল্পটি ২০২৪ থেকে ২০৩০ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে ইডিসিএফ তহবিল থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং ইডিপিএফ তহবিল থেকে ৯ কোটি মার্কিন ডলারের দুটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম রোড সেতু নির্মাণের মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা হবে।

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশবিশেষ নির্মাণ, স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং আন্ত–আঞ্চলিক বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা হবে।

প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পে ইডিসিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ০.০১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৫ বছর ৫ মাস। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৪০ বছর ৫ মাসে তা পরিশোধ করতে হবে। অপরদিকে ইডিপিএফ তহবিলের আওতায় ঋণচুক্তির সুদের হার ১ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৭ বছর। গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ৩০ বছরে তা পরিশোধ করতে হবে।

কোরিয়া সরকারের কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অগ্রাধিকার উন্নয়ন প্রকল্পে নমনীয় ঋণসহায়তা দিয়ে আসছে।

রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম আশা প্রকাশ করেন, নতুন অর্থবছরেই এ প্রকল্পে কোরিয়ান ঋণের অর্থ মিলবে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন মোতাবেক জানা গেছে, বর্তমানে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপরে যে পুরনো সেতু রয়েছে তার ঠিক ৭০ মিটার উজানে এই প্রস্তাবিত নতুন সেতু নির্মিত হবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার আর এতে নেভিগেশন হাইট বা উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২ মিটার আর এ জন্য দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫০ মিটার করে। সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন সেতু হচ্ছে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডাবল গেজ ও মিটার গেজ (এমজি ও বিজি) ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়ক পথ তৈরি করা হবে।

সেতু নির্মাণ হলে: সেতুটি নির্মাণের পর, এই সেতু দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রতিদিন ২০ জোড়া ট্রেন পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রেলওয়ে। ফলস্বরূপ, কালুরঘাট রেল–কাম–সড়ক সেতু প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে আনুমানিক ১০ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions