আমেরিকা ও ভারতের মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে,শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে ‘তথাকথিত স্বাধীন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আমেরিকা ও ভারতের যৌথ মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে দিল্লি বা ওয়াশিংটনের কোনো ফর্মুলা মানতে নারাজ বলে জানান সংগঠনের নেতারা।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে দেশবিরোধী উপজাতি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এমন দাবি জানান।

এসময় তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখতে এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষার্থে সাত দফা দাবি জানান।

সমাবেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ভারত সময়ে-অসময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, এখনও করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের এক ধরনের ঘৃণা তৈরি হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় সেসব অবৈধ হস্তক্ষেপকে বাংলাদেশের জনগণ কীভাবে প্রতিহত করেছে সেটা আমেরিকার বোঝা উচিত। আদিবাসী ও জুম্ম প্রচারণা, পার্বত্য বাঙালিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে সেটেলার বানানো, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উপজাতিদের উসকে দেওয়াসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আমেরিকাও যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ না করে তাহলে আমেরিকার প্রতিও বাংলাদেশের জনগণের ঘৃণা তৈরি হবে, যেটা দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার জন্য সুখকর হবে না।

সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ ওমর বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শক্তিশালী বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের যে অনন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তাদের পুরোনো চক্রান্ত বাস্তবায়নে আবার নতুন করে মাঠে নেমেছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাসরত চাকমা ও ত্রিপুরা নেতারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে হস্তক্ষেপ করতে মোদির কাছে চিঠি লিখেছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফেভ তথাকথিত আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে। তাছাড়া তারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং জাতীয় পরিচয়ে তাদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে মার্কিন-ভারতের ষড়যন্ত্র খুবই স্পষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে মার্কিন-ভারতের ষড়যন্ত্রসহ সব দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের মুক্তিকামী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে রুখে দাঁড়াবে।

সরকারের কাছে শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি হলো–

১. বাংলাদেশের উপজাতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে আদিবাসী ও জুম্ম শব্দ ব্যবহার এবং বাংলাদেশের বাঙালিদের সম্বোধনে সেটেলার শব্দ ব্যবহারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করতে হবে। ব্যক্তি, এনজিও, মিশনারি কিংবা প্রতিষ্ঠান যারাই এমন শব্দ ব্যবহার করবে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো বিদেশি ওইসব শব্দ ব্যবহার করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

২. বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সব অঞ্চলে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করতে হবে। এজন্য একই আইন প্রচলন ও কার্যকর করতে হবে।

৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরিতে উপজাতি কোটা বাতিল করতে হবে। পাহাড়ের বাঙালিদের বাদ দিয়ে উপজাতিদের জন্য কোটা রাখা মারাত্মক রকমের বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল নতুন বাংলাদেশে উপজাতি কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে।

৪. ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে প্রবেশ করিয়ে বাংলাদেশকে ভারত-আমেরিকা বনাম চীন দ্বন্দ্বের প্রক্সি স্টেট বা বলির পাঠা বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আরও বেশি অস্থিতিশীলতা ও ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া যাবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।

৫. পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসন, সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে।

৭. ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী উপজাতি কর্তৃক সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ না করায় সংবিধানবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাতিল করতে হবে।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions