জাতিসংঘের অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি ড. ইউনূসের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিরল বৈঠক,অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়ূর্কে জাতিসংঘের অধিবেশন বসে। সদস্যদেশগুলোর অংশগ্রহণে অধিবেশনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হন জাতিসংঘের মহাসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পেছনেই পড়ে থাকে। রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ে ভাষণ দেন। অত:পর কিছু নেতার সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করেন। জাতিসংঘে গত ৫০ বছর ধরে এটাই চলে আসছে। কিন্তু এভার জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা (প্রধানমন্ত্রী) হিসেবে অধিবেশনে যোগদান করেছেন। ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজে পাল্টে গেছে জাতিসংঘের অধিবেশনের দৃশ্যপট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অধিবেশনে অংশ নেয়া রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানদের সবার দৃষ্টি ড. ইউনূসের দিকে। একমাত্র ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা উৎসুক দৃষ্টিতে ড. ইউনূসের দিকে থাকিয়ে থাকছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ কাছে এসে করমর্দন করছেন। ইউনূসের সঙ্গে কথা বলতে পেরেই যেন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের ধন্য মনে করছেন। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ও ক্লিনটন ফাউণ্ডেশনের প্রধান পৃষ্টপোষক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তিনি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা উপস্থাপন করেন। এ ছাড়াও জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিশেষ বৈঠক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কখনও ভালো, কখনও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। গত এক দশকে বিভিন্ন ইস্যুতে সেই সম্পর্ক একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতা, যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য উক্তি ও কটাক্ষ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপর হামলা থেকে শুরু করে নানাভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা দেশটিকে বাংলাদেশ থেকে একটু একটু করে দূরে নিয়ে গেছে।

সেই দূরত্ব ঘোচাতে এবং সম্পর্কে পুনরায় গতি ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিশেষ করে এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। যার বাস্তব রূপ দেখা মিলেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে দেশ দুটির সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মধ্য দিয়ে। বিষয়টি অত্যন্ত ‘বিরল’ বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো দেশের শীর্ষনেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তেমন নজির নেই। যেটি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এদিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাছে পেয়ে বুকে টেনে নেন। পরম মমতায় একজন ভাই যেমন আরেক ভাইকে বুটে টেনে নেয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঠিক তেমনি ড. ইউনূসকে বুকে টেনে নিয়েছেন। হাতে হাত রেখে বলেছেন, বাংলাদেশের সংস্কারের যে লক্ষ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ঠিক করেছেন, তাকে বাস্তবে রূপ দিতে সবধরনের সহযোগিতা করবে হোয়াইট হাউস।

এ তো গেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের গল্প। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সরকারপ্রধানরাও ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সাথে হাত মেলাতে অথবা কুশলাদি বিনিময় করতে। গোটা অধিবেশনের স্পটলাইট ছিল মূলত ড. ইউনূসের উপরেই। যেখানে বাংলাদেশ নামক পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র একজনের কারণে উঠে গেছে অনন্য উচ্চতায়। স্বাধীনতার পরে বিশ্বের দরবারে এমন উজ্জ¦ল বাংলাদেশ জাতিসংঘে কেউ দেখেনি। যেটা সম্ভব হয়েছে একজন ড. ইউনূসের কারণে।

প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে মঙ্গলবার রাতেই দুই শীর্ষনেতার বিরল বৈঠকের ছবি ও সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনের ফাঁকে রাতে (নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে) বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
৩০ বছর পর হওয়া এমন বৈঠকে দুই দেশের (বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র) সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার কূটনীতিকরা।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ড. ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সবধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা এবং বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান।

ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেকোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে তুলে দেন।

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, আজকের বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক। কারণ, জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষনেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজ থেকে বাংলাদেশে কী কী সমর্থন ও সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি তার সরকারের পূর্ণ সমর্থন বাংলাদেশ পাবে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বিরল ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিয়েছেন। তার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ড. ইউনূস নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্ট বইটি হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও ভিসা দিতে ট্রুডোকে অনুরোধ ইউনূসের বইটিতে জুলাই-অগাস্ট মাসে ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহর ও নগরের দেয়ালে তরুণ শিক্ষার্থীদের আঁকা সেরা কিছু শিল্পকর্মের ছবি স্থান পেয়েছে। ইউনূস অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি সংশ্লিষ্টদের এ আর্টবুক প্রকাশের নির্দেশ দেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। বিজয় উদ্যাপনে দেশজুড়ে নানা গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র আঁকেন শিক্ষার্থীরা। রং-তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠে বিপ্লব, বিদ্রোহ ও বিজয়ের চিত্র। সৃজনশীল ও হৃদয়গ্রাহী স্লোগান ও কবিতার মাধ্যমে সরকারকে দেওয়া হয় শক্তিশালী নানা বার্তা।

মনের মাধুরী মিশিয়ে দেয়ালে-দেয়ালে ফুটিয়ে তোলা শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন-বাসনার এসব নান্দনিক ও নজরকাড়া চারুকলা গোটা ঢাকা শহরের চেহারা পাল্টে দেয়। এর মধ্যে অনেক গ্রাফিতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। প্রশংসা কুড়ায় সর্বস্তরের মানুষের।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ৮টায় অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সেখানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদানকারী বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানান সংস্থাটির মহাসচিব।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা, মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বিরাজ সিং রূপন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার ভলকার টুর্কসহ অন্যান্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এদিন জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ড. ইউনূস। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এ কুশল বিনিময় হয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী আজ ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতিসংঘের সচিবালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা গতকাল মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শেহবাজ শরিফ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মার সাথে বৈঠক করেন। আজ তিনি নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

অন্যদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইয়েন, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এলডিসি, এলএলডিসি ও সিআইডিএসর উচ্চ প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবো, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, ইউএনডিপি প্রশাসক আখিম স্টেইনার এবং ইউএসএআইডি প্রশাসক সামান্থা পাওয়ার নিউইয়র্কে অবস্থানকালে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাথে তাঁর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউস
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বৈঠকের বিষয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি (রিড আউট) প্রকাশ করে হোয়াইট হাউস।

এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাম্প্রতিক নিয়োগের অভিনন্দন জানাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছেন।
এতে বলা হয়েছে, উভয় নেতা যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যার ভিত্তি অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন।

রিড আউটে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন দুই সরকারের (উভয় দেশের) মধ্যে আরও সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বাংলাদেশের নতুন সংস্কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে অব্যাহত মার্কিন সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া এই বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ‘পূর্ণ সহযোগিতার’ আশ্বাস দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

কীভাবে বাংলাদেশের ছাত্ররা আগের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং জীবন দিয়েছে, সেটি জো বাইডেনের কাছে বর্ণনা করেছেন ড. ইউনূস। দেশ পূণর্গঠনে তার সরকার জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার হতে পারে বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

জো বাইডেন বলেছেন, দেশের জন্য যদি ছাত্ররা এভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে তাদের দেশের জন্য আরও কিছু করা উচিত। এছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীরা যেসব দেয়াল চিত্র এঁকেছিল, সেসবের ছবি সংবলিত “দ্যা আর্ট অব ট্রায়াম্ফ” নামের একটি বই প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে উপহার দেন প্রধান উপদেষ্টা।

নতুন বাংলাদেশ গড়তে সহযোগিতা চেয়েছেন ড. ইউনূস
তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, যুবসমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এ সুযোগ হারাতে চাই না। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপ্রাপ্তির ৫০তম বছর উদযাপন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।

সংবর্ধনা আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ছিলেন-পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি মাহফুজ আলম ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল আমরা তাদের হতাশ করতে চাই না। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে একটি নতুন নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ড. ইউনূস বলেন, যুবসমাজের সামনে কোন স্বপ্ন ছিল না। স্বৈরাচার তাদের স্বপ্ন ও ভব্যিষতকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তাই তারা স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পিছপা হয়নি।

বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা যে সাহস ও প্রত্যয় দেখিয়েছে, তা আমাদেরকে অভিভূত করেছে। বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে তারা পঙ্গুত্ব বরণ করতে পিছপা হয়নি। তিনি বলেন, তরুণদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার বাংলাদেশ গড়তে আমরা আপনাদের পাশে চাই।

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা দুদিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

আজ জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে বৈঠক ছাড়াও বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সাথে তাঁর বৈঠক হবে। আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০ টায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions