বান্দরবান:- পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বহুল আলোচিত পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাথে দ্বিতীয়বারে মতো সরাসরি বৈঠক করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল পৌনে এগারোটা বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেল পাড়া কমিউনিটি সেন্টারের হল রুমে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দফার বৈঠক।
এসময় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য এবং কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক লাল জংময় নেতৃত্বে আটজন বৈঠকে অংশ নেন।
কেএনএফের সদস্যরা হলেন, কেএনএফ সেন্ট্রাল কমিটি ও টিম লিডার, কেএনএফ’র রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর পিস ডায়ালগের সাধারণ সম্পাদক মি. লালজংময়, সাংগঠনিক সম্পাদক লালসাংলম, উপদেষ্টা লালএংলিয়ান, এক্সেকিউটিভ মেম্বার পাস্টর ভানলিয়ান বম, গ্রাহাম বম, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রুয়াললিন বম, সাংপাহ খুমি, আজৌ লুসাই।
এদিকে বৈঠককে ঘিরে বেথেল পাড়া এলাকায় প্রত্যেকটি স্থানে দেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পাশাপাশি কেএনএফের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক বৈঠক স্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়।
রুদ্ধদার এ বৈঠকে টানা কয়েকঘণ্টা ধরে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে কেএনএফ সাতটি দাবি তুলে ধরে।
জানা গেছে, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুন মাসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈ হ্লার নেতৃত্বে ১৮ জন সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। পাহাড়ে বিরাজমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকবার ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হলেও সবশেষে গত ৫ নভেম্বর রুমার মুনলাই পাড়ায় কেএনএফ এর সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বৈঠকে কেএনএফ চারটি দাবি উপস্থান করে। এবার দ্বিতীয় বৈঠকে চারটিসহ মোট সাতটি বিষয়ে দাবি উপস্থাপন করে কেএনএফ।
কুকি-চিন ন্যশনাল ফ্রন্ট কেএনএফের সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সাং লম বম বলেন, গতবারে বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে যেসব দাবি স্বাক্ষর করা হয়েছে সেগুলো থেকে যেসব বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোসহ নতুনভাবে যোগ করে সাতটি দাবি স্বাক্ষরিত করা হয়েছে। আশা করছি অতি শীঘ্রই শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি সেই বিষয়ে কাজ করবেন এবং একটি সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের দীর্ঘ বিশ্বাস।
এলাকার শান্তি ফিরে আসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে লাল সাং লম বম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি অবশ্যই শান্তি ফিরে আসবে এবং আমরা শান্তির পথে যাচ্ছি। তাছাড়া একদিনে তো শান্তি ফিরে আসে না পারস্পরিক আলোচনা এবং এবারে দ্বিতীয়বার মত আলোচনা হয়েছে ও পর্যায়ক্রমে এই এলাকার শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি মুখ্যপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কিছু কিছু দাবি আছে যেটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি মাঝে আলোচনা যোগ্য যেগুলো এখন আলোচনা করা যাচ্ছি। আর যেগুলো তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে যেগুলো আমাদের দ্বারা সম্ভব না সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের সাথে কেএনএফ মাধ্যমে যদি যোগাযোগ হয় সেটি আলাদা বিষয়। আর আজকের আলোচনায় তাদের যে সাতটি দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি আমরা নোট করে নিয়েছি। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি ও কেএনএফ সদস্যরাও আশাবাদী যে সংলাপ চলাকালীন এলাকার শান্তিপূর্ণ বজায় থাকবে।
বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা সাংবাদিকদের জানান, ২০২৩ সালে প্রথম বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আরো কয়েকটি দাবি-দাওয়া যোগ হয়েছে। কেএনএফের যে দাবি-দাওয়াগুলো রয়েছে সেগুলো সরকার কাছে উপস্থাপন করা হবে।
ক্যশৈহ্লা বলেন, আজকে দু’পক্ষে যে আলোচনা হয়েছে সেটি খুব কাছাকাছি এসেছি এবং আগামীতে আরো বৈঠকে মাধ্যমে সমাধান আসবে। তাছাড়া পাহাড়ের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত পলিশ সুপার আব্দুল করিম, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা, লালজার লম বম, লাল থাং জেল, লাল ভান তিলিং বম, মনিরুল ইসলাম মনু, উজ্জ্বল তঞ্চঙ্গ্যা, সিঅং খুমী, সিংইয়ং ম্রো, কৃপা ত্রিপুরাসহ পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।