সীমান্তরক্ষীসহ ৩৩০ জনকে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১০৯ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- অবশেষে আরাকান আর্মির (এএ) আক্রমণের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ নাগরিককে ফেরত নিয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার পরে তাদের হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল Myo Thura Naung এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল বিজিবির নিকট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মিয়ানমার নাগরিককে গ্রহণ করেন।

এর আগে ভোর পাঁচটা থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম এবং টেকনাফের হ্নীলার উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্প থেকে ১২টি বাসে করে আশ্রিত মিয়ানমার নাগরিকদের ইনানীতে আনা হয়। তাদের বহন করা প্রতিটি গাড়ির সামনে পেছনে দুটি বিজিবির গাড়ি পাহারা দেয়। এবং গাড়ি থেকে নামানোর সময়ও বিজিবির সদস্যরা ইনানীতে স্থাপিত তাঁবুতে নিয়ে যান। হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরুর আগে থেকেই সীমান্ত এলাকা এবং ইনানীতে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিয়ানমারের পালিয়ে আসা ৩৩০ সীমান্তরক্ষীকে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় আস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ভোর ৫টা থেকে ১২টি বাসে করে উখিয়ার ইনানী উপকূলের নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আনা হয়। বেলা ১১টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ইনানীতে এসে পৌঁছলে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সভা করা হয়। এরপরে বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে একে একে মিয়ানমার নাগরিকদের হস্তান্তর করা হয় করেন বিজিবি মহাপরিচালক। ইনানী জেটিঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘কর্ণফুলী’ ও ‘বার আউলিয়া’র মাধ্যমে গভীর সাগরে অবস্থান করা মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজে পাঠানো হয় তাদের।

বিজিবির দেওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার নাগরিকের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিক। আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে বর্তমানে ৯ জন অসুস্থ রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ৪ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মিয়ানমার নাগরিকদের হস্তান্তর কার্যক্রম শেষে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা বাহিনী ও সেদেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু তাদের অভ্যন্তরীণ এই সংঘাতের প্রভাব আমাদের সীমান্তেও এসে পড়েছে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের ৩৩০ জন নাগরিক বিজিবির কাছে সশস্ত্র আত্মসমপর্ণ করে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ধৈর্যধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রেখেছি। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপি সদস্যদের সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান দেওয়া হয়। গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহতদের বিজিবির তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, বিজিবি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে সীমান্তে বিজিবি’র টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজিবি সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিজিবি’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক, সীমান্ত দিয়ে আর একজন মিয়ানমার নাগরিককেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বিজিবি মহাপরিচালক স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং সীমান্তবর্তী সর্বস্তরের জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ‍তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions