ডেস্ক রির্পোট:- পাকিস্তানে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আবারো সরকার গঠন করার পথে রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। তবে এই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে দল দুটি এখনো কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। পিপিপি শর্ত দিয়েছে, দলটির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টোকে যদি প্রধানমন্ত্রী করা হয়, তবেই তারা পিএমএল-এনকে সমর্থন দেবে। এদিকে পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরীফও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে নারাজ। সর্বশেষ জানা গেছে, নওয়াজ ও বিলাওয়াল এখন প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে জিও টিভি।
খবরে জানানো হয়, আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনে সম্মত হয়েছেন পিএমএল-এন ও পিপিপি নেতারা। আর এই পাঁচ বছরের মধ্যে ‘আড়াই বছর করে’ পিএমএল-এন এবং পিপিপি’র প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। রোববার রাতেই এ নিয়ে দুই দলের মধ্যে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমটি। ওই আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘পাকিস্তানকে বাঁচাতে’ দুই দলই সম্মত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রিত্ব নিয়ে কোনো সুরাহা হলো কিনা সেটি স্পষ্ট করা হয়নি।
সূত্রের বরাত দিয়ে জিও টিভি জানিয়েছে, পিএমএল-এন দলই প্রথম সরকার গঠনের জন্য পিপিপি’র কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠায়।
পিএমএল-এন নেতারা জানিয়েছেন যে, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও এমকিউএম-পাকিস্তান দলের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। দলটি প্রধানমন্ত্রীর আসন নওয়াজ শরীফের জন্য রাখতে চায়। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এর আগেই বিলাওয়ালকে এই পদ দেয়ার কথা বলেন। এরপরই আলোচনা অন্য ধাপে প্রবেশ করে। সেখানে দুই দল একটি সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তখনই আড়াই বছর করে ক্ষমতা ভাগাভাগির কথা ঠিক হয়।
রোববারের ওই বৈঠক হয় লাহোরের বিলাওয়াল হাউসে। এতে পিপিপি’র পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আসিফ আলি জারদারি ও বিলাওয়াল ভুট্টো। অপরদিকে পিএমএল-এনের তরফে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, আজম নাজির তারার, আয়াজ সাদিক, আহসান ইকবাল, রানা তানভির, খাজা সাদ রফিক, মালিক আহমদ খান, মরিয়ম আওরঙ্গজেব ও শেজা ফাতিমা। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়াও পিপিপি এবং পিএমএল-এন অন্যান্য বিষয় নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে পিএমএল-এন ও এমকিউএম-পি দলের নেতারাও রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হন। এ দলটিও সরকারে যোগ দিচ্ছে বলে পিএমএল-এন দলের তরফে দাবি করা হয়। ওই আলোচনায় ছিলেন দুই দলের প্রধান নওয়াজ শরীফ ও খালিদ মকবুল সিদ্দিকী। যদিও পরবর্তীতে সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন মকবুল সিদ্দিকী। এদিকে নওয়াজ শরীফ জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। সূত্র বলেছে, তারাও খুব সম্ভবত সরকারে যোগ দিতে সম্মত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার সময়ও পিএমএল-এনের সঙ্গে মিলে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের জোট গঠন করেছিল জেইউআই-এফ। ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তারা সরকার গঠন করে। এবারো যদি তাই হয় তাহলে এটা হবে পিডিএম-এর দ্বিতীয় মেয়াদ।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হয়। ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে নির্বাচন হয় আর স্থগিত রয়েছে এক আসন। ফলাফলে দেখা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯৬টি আসন পেয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫টি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫৪টি আসন পেয়েছে বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি।
কিন্তু সর্বোচ্চ আসন পেয়েও ক্ষমতার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন ইমরান খান। কারণ তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আবার সরকার গঠনে পিএমএল-এন বা পিপিপি’র সঙ্গে জোট করতেও আগ্রহী না পিটিআই। ফলে পিএমএল-এন ও পিপিপি এখন জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। বিষয়টি যদিও নির্বাচনের পরদিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্নে এখনো কোনো সমাধান হয়নি। এর আগে ২০১৩ সালে বেলুচিস্তানে পিএমএল-এন এবং ন্যাশনাল পার্টি (এনপি) একই রকমভাবে ক্ষমতার ভাগাভাগি করেছিল। সে সময় দল দুটির দুই মুখ্যমন্ত্রী আড়াই বছর করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।