শিরোনাম

নির্বাচন প্রশ্নে যে কৌশলে হাঁটছে বিএনপি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৩৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয় সংসদ ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন ও রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে শনিবার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। সামনে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল এবং জোটসহ বাম-ডান দলগুলোর সঙ্গেও
আলোচনা করবে। তাদের এক প্ল্যাটফরমে এনে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে মাঠে সোচ্চার থাকবে বিএনপি। দলটি মনে করছে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা দরকার। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা সহজ হবে। নির্বাচন প্রলম্বিত হলে যড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তৃত হতে পারে।

ওদিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়ে দলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। বিএনপি মনে করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলে দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে পারবে।

সর্বশেষ গত ৫ই এপ্রিল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করেন। বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও ছিলেন। বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়। যদিও হেফাজত তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের বিচার হওয়ার পর নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করেছে। হেফাজত নেতাদের আগ্রহেই বিএনপি’র সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে তারা সংস্কারের বিষয়ে নিজেদের কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। বৈঠকে নির্বাচন ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার শেষে বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চাইছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দ্রুত নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে এমনটা না। অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, বিএনপি’র ৩১ দফায় সেগুলো প্রায় সবই রয়েছে। যদি বিএনপি ক্ষমতায় যায় তাহলে সেগুলো সকলকে নিয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়ে আসছে আগে থেকেই। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, দলের নির্বাচন দাবিকে অনেকে নেতিবাচক হিসেবে প্রচার করছে নিজেদের স্বার্থে। এ ধরনের প্রচারণা থামাতে অন্যান্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন দাবিতে মাঠে থাকতে চায়। এ বিষয়ে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দলের নেতারা। এর বাইরে থাকা দল ও জোটের সঙ্গেও নিজেদের রাজনৈতিক মনোভাব আদান প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যাতে নির্বাচন ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠে। এর আগে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে গত ২২শে জানুয়ারি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ। ২৭শে জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠকে তারা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হন।

বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াত ও নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন ইস্যুতে যে ধীর চলা নীতি নিয়েছে এটি তাদের দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে নিয়েছে বলে মনে করছেন। এজন্য তারা এই দুই দলের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়াতে চায়। রাজনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি জনসমর্থন আদায়ে নেতারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সার্বিক বিষয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা সকল দলের সঙ্গে আলোচনায় আছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সময় আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এবং সকল গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা জারি রাখতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং কোনো রাজনৈতিক জোটেও অংশ নেবে না। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, সেক্ষেত্রে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে কোনো বাধা দেয়া হবে না। হেফাজত সরাসরি কোনো রাজনৈতিক জোটে যাচ্ছে না এমনটা জোর দিয়েই বলে আসছেন নেতারা। জোট গঠনের ক্ষেত্রে গত শনিবার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বিএনপি’র দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়েও অন্তর্বর্তী সরকার যে বক্তব্য দিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কম চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন, আবার বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলগুলো ইতিমধ্যে মতামত দিয়েছে। ঐকমত্য হয়েছে এমন বিষয়গুলোতে এখনই সংস্কার শুরু করা যায়। আর যেসব ইস্যু সময় সাপেক্ষ তা নির্বাচিত সরকার করতে পারে। সংস্কারের কথা বলে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করা গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সরকারের আট মাস হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সংস্কারের বিষয়ে দৃশ্যমান বড় কিছু হয়নি। এভাবে চললে সংস্কারের বিষয়ে দৃশ্যমান বড় কিছু করতে হলে সরকারকে আরও অনেক সময় দিতে হবে। যা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্ভব নাও হতে পারে। সরকার চাইলে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা আমরা করছি। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছি। মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions