বান্দরবান:- বান্দরবানের থানচি উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পাড়া প্রাতাপাড়া। এখানে বম জাতিগোষ্ঠীর বেশ কিছু পরিবারের বসবাস। সম্প্রতি ১১টি পরিবার ফিরেছে সেখানে। তবে এখনো অনেক বাড়ি ফাঁকা।
গত সোমবার গিয়ে দেখা গেল, অনেক বাড়ির উঠানে ঘাস এবং ঘরের ভেতরে লতাগুল্ম গজিয়েছে। সেখানে কথা হলো চমকোয়াল বমের (৭০) সঙ্গে। বললেন, ‘বাড়ি ছাড়ার পর থেকে শরণার্থীর মতো জীবনযাপন করেছি। এখন বাড়ি ফিরে দেখছি, ঘরে রেখে যাওয়া ধান, কাপড়চোপড়, বইপুস্তক, হাঁড়ি-পাতিল সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’
গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ছেড়েছিলেন চমকোয়াল। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্য ও জঙ্গিরা সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালালে প্রতিরোধের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা অভিযান চালায়। পরে বাধ্য হয়ে প্রাতাপাড়ার বম জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বাড়ি ছাড়ে। এরপর সেখানে জঙ্গি দমনে ব্যাপক অভিযান চালানো হয়। এরপর আর সেখানে তারা ফিরতে পারেনি। নভেম্বরের শুরুর দিকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে কেএনএফের সমঝোতা হয়।
ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, কেএনএফের তৎপরতার কারণে যে বম পরিবারগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের ফেরার ব্যবস্থা করা হবে। এরপরই বম জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সেখানে ফিরতে শুরু করেছে। চমকোয়াল বলেন, ‘আমাদের পাড়ার মোট ২৮ পরিবার মার্চ মাসে সবাই জঙ্গলে পালিয়েছিলাম। পরিবারের ছোট ছোট শিশু ও নারীদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী সেরকরপাড়ায় আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ফিরে দেখি সব নষ্ট হয়ে গেছে। জুমের ফসল না পাওয়া পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা দিলে আমরা বাঁচতে পারব। এ ছাড়া সম্ভাব্য রাস্তা দেখছি না।’
১৮ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রাতাপাড়ার বম জনগগোষ্ঠীর ১১ পরিবারের ৪৯ জন সদস্য, রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইক্ষ্যংপাড়ার ৫৭ পরিবারের ২০০ জন, দুর্নিবারপাড়ার ২৭ জন এবং ক্যাপ্লাংপাড়ার ১৭ জন ফিরেছে। কথা বলে জানা গেল, মোটামুটি প্রতিটি বম পরিবারের অবস্থা একই রকম। প্রাতাপাড়ার পারকেল বম (৫৩) বলেন, ‘হারানোর বেদনা, পালিয়ে থাকার যন্ত্রণা সবাইকে সমানভাবে স্পর্শ করবে না। পৃথিবীর আর কোথাও যেন ফিলিস্তিন তৈরি না হয়।’
রনি বম বলেন, ‘এপ্রিল-মে মাসে জুমের ধান রোপণ করব, জুলাই-আগস্ট মাসে নতুন ফসল পাব। সে পর্যন্ত আমাদের ১১ পরিবারের ৪৯ সদস্যের খোরাক চালানোর মতো অবস্থা নেই।’ গত সোমবার দীর্ঘ ৯ মাস জঙ্গলে ও আত্মীয়দের বাড়িতে থাকার পর নিজ বাড়িঘরে ফেরার আনন্দ দেখা গেল তাদের মধ্যে। তবে সেই সঙ্গে অনেকের চোখে আতঙ্কও দেখা গেল। আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দ্বিতীয় দফা বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে তারা।
আসছে ত্রাণ
এদিকে প্রাতাপাড়ায় বম জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো ফিরে আসার পরপরই ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। সেখানকার বাকলাই সেনাক্যাম্পের অধিনয়ক ক্যাপ্টেন সালমান বলেন, ‘আমি প্রাতাপাড়া সরেজমিনে গিয়েছি। সাময়িকভাবে বিশুদ্ধ পানি, চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, ময়দা সেনাসদস্যদের রসদ থেকে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও দেব।’
উপজেলা প্রশাসনও এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবুল মনসুর বলেন, গত বৃহস্পতিবার প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, চিনি ১ কেজি, ১ লিটার করে তেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য
দেওয়া হয়েছে।