ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ফ্যাসিবাদ মুক্তির আন্দোলনের কোনো একক মাস্টারমাইন্ড নেই। দেশের মানুষ আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। আন্দোলনের নেতৃত্বের কৃতিত্ব যুবসমাজের। যাদের জীবনের বিনিময়ে আমরা জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছি।
সেই বীর শহীদদের জামায়াত দলীয়ভাবে বিবেচনা করে না। তারা জাতীয় বীর।’
জামায়াত ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ চাই। কোনো সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠতায় দেশ বিভক্তি চাই না।
’
শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে বগুড়া শহর ও জেলা শাখার সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাজারো শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে কাজে লাগিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এ জন্য আমাদের নিজেদের জাতির সামনে সৎ ও যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। জাতি ইনসাফপূর্ণ সমাজ চায়।
সে সমাজ গঠনে জামায়াতকে এগিয়ে আসতে হবে। জাতি আমাদের ওপর যে আশা করে তা যেন আমরা পূরণ করতে পারি সে জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।’
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘বিগত সাড়ে ১৩ বছর আওয়ামী জুলুমের কারণে আমরা দলীয় অফিসে বসতে পারিনি। নিজের বাড়িঘরে থাকতে পারিনি। ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি করতে পারে নাই।
পরিবারের ঠিকমতো খবর নিতে পারে নাই, মা-বাবা, আত্মীয় মারা গেলে তাদের মুখও দেখতে পারেনি। আল্লাহ আমাদের ওপর রহমত ঢেলে দিয়েছেন বলে আজ বড় সমাবেশ করতে পারছি। তাই এ সময়কে কাজে লাগিয়ে সবার কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।’
বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অধ্যাপক আসম আব্দুল মালেকের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গোলাম রব্বানী, বগুড়া অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আব্দুর রহিম ও নজরুল ইসলাম, বগুড়া পশ্চিম জেলা আমির মাওলানা আব্দুল হক সরকার, পূর্ব জেলা আমির অধ্যাপক নাজিম উদ্দিন, জয়পুরহাট জেলা আমির ডা. ফজলুর রহমান সাইদ, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির শাহীনুর আলম।
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার বিচারের নামে প্রহসন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের খুন করেছিল। জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিসসহ সারা দেশের অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল। সাড়ে ১৩ বছর আমরা আমাদের অফিসে বসে কোনো কাজ করতে পারিনি। গায়ের জোরে আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিশাহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু ক্ষমতা ছাড়েননি, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ভয়ে দেশ ছেড়েই পালাতে বাধ্য হয়েছেন।’
আমিরে জামায়াত বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সাধ্যমতো সকল শহীদ এবং আহতদের পাশে থাকবে। তিনি বগুড়ায় আন্দোলনে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন।’
এর আগে ২০২৫-২৬ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত বগুড়া শহর আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল ও জেলা আমির মাওলানা আব্দুল হক সরকারকে শপথ বাক্য পাঠ করান। সম্মেলনে চার হাজারেরও বেশি নারী ও পুরুষ রুকন অংশ নেন।
দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর এই খেলার মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশ করল জামায়াত। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেওয়া বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী গোলাম রব্বানীর নির্বাচনী জনসভা হয়েছিল এই মাঠে।