ডেস্ক রির্পোট:- অভিনেত্রী পরীমণির বাসায় বিভিন্ন সময় রাত্রীযাপন করতেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েন। মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্টে এমন প্রমাণ মিলেছে।
গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে উপসচিব রোকেয়া পারভিন জুঁই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের এডিসি থাকাকালে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে পরিচয়, যোগাযোগ শুরু হয় গোলাম সাকলায়েনের। তিনি নায়িকা পরীমণির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা থেকে দেওয়া ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমণির বাসায় অবস্থান করেছেন তৎকালীন ডিবির এই কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ১ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে ২ আগস্ট রাত ৩টা পর্যন্ত রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে পরীমণির যাতায়াতের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজের ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও সাক্ষীদের জবানবন্দিতে জানা যায়, ১ আগস্ট সাকলায়েনের পূর্ব পরিকল্পনা ও তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় পরীমণি তার রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ আগস্ট রাত ১টা ৩০ মিনিটে বাসা ত্যাগ করেন।
এতে আরও বলা হয়, সাকলায়েন ও পরীমণির সম্পর্কের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনমনে এ বিষয়ে নানারূপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দেয়। সাকলায়েন বাংলাদেশ পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমণির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও পরীমণির সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমণির সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন ও নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। উল্লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাক্ষীদের জবানবন্দি, অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক লিখিত জবাব, মৌখিক বক্তব্য ও অন্যান্য কাগজপত্রাদি পুনরায় বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনাস্তে ২য় কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে বিধি ৪ এর উপ-বিধি ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘গুরুদণ্ড’ হিসেবে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রসঙ্গত, পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন সাকলায়েন। পরীমণির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পর প্রথমে তাকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করা হয়। পরে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়।