রাঙ্গামাটি: বিদ্যুৎ, মৎস্য, যোগাযোগ, পর্যটন শিল্প এবং বনজ সম্পদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাপ্তাই হ্রদ। অটল সম্পদে ভরপুর এ হ্রদ থেকে অর্জন যতই হোক, অবজ্ঞা অবহেলা, অযত্নে রাখা হয়েছে ততই।
হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মকাল এলে যোগাযোগে নেমে আসে দুভোর্গ। সেসময় চরম বিপাকে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ।
তবে ছয় দশকের বেশি সময় পর এইবার কাপ্তাই হ্রদের দুঃখ ঘুচতে যাচ্ছে। হ্রদের নাব্যতা সংকট দূর এবং উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকশ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার ১৯৬০সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করলে সৃষ্টি হয় কাপ্তাই হ্রদ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এ হ্রদে সৃষ্টি হয় বিশাল মৎস্য ভাণ্ডার। হ্রদে উৎপাদিত এই মৎস্য সম্পদের সারাদেশে আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে। সরকার মৎস্য সম্পদ থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি বনজ সম্পদ থেকেও সরকার রাজস্ব আদায় করছে।
শুধু তাই নয়; জেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এ হ্রদকে ঘিরে। হ্রদকে অবলম্বন করে দিনে দিনে জেলায় পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটছে। লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা ঘুরছে এ হ্রদকে উপজীব্য করে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পলি ভরাট, পরিকল্পনাবিহীন মানুষের বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে।
গ্রীষ্ম মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে জেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, ক্ষতি হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন, হ্রাস পায় মৎস্য ভাণ্ডার। বনজ সম্পদের কাঠ পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। হ্রদের এমন বেহাল দশা থেকে পরিত্রাণ পেতে দখল, দূষণ রোধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনতে ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কাপ্তাই হ্রদ রক্ষায় এ সমস্যাটি নিরসনে জেলার বাসিন্দারা কয়েক দশক ধরে সোচ্চার দাবি জানিয়ে আসছে।
রাঙ্গামাটির লঞ্চ কর্মচারী মো. হৃদয় খান বলেন, কাপ্তাই লেকের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরাও চরম অর্থ সঙ্কটে আছি।
রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্তমান শুকনো মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানি নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। লেকের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। আমরা চাই, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই লেক আগের অবস্থায় ফিরে আসুক।
হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯৭৭ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরি করেছে। প্রস্তাবটি একনেকে গৃহীত হলে চলতি বছরে হ্রদের ড্রেজিং কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে সরকারের অনেক ভাবনা-চিন্তা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার কাপ্তাই হ্রদের স্থায়ী উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেছেন। আশা করছি এ বছরের যেকোনো একটি দিন কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, কাপ্তাই হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা কিছু করার দরকার তাই করা হবে। হ্রদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নানা সমস্যা থেকে উত্তরণ হয়ে স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশির কাপ্তাই হ্রদ তার হারানো গৌরব ফিরে পেলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চাকা সচল হবে, আত্মসামাজিক ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে, সরকার রাজস্ব আদায়ে লাভবান হবে এমনটা প্রত্যাশা জনসাধারণের।বাংলানিউজ