শিরোনাম
রাঙ্গামাটিতে এমএন লারমা’র মৃত্যুবার্ষিকীতে নানান আয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রায় ৯১৫ মে. টন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিলস পাকিস্তানে সংবিধান সংশোধন: সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়ছে, কমছে উচ্চ আদালতের ওজন কমাতে ওজেম্পিক গুঞ্জন: ক্ষুব্ধ তামান্না ভাটিয়া চট্টগ্রামে অস্থিরতার নেপথ্যে এক ডজন সন্ত্রাসী, আছে রাজনৈতিক মদত আচরণবিধি ভাঙলে প্রার্থিতা বাতিল, গেজেট প্রকাশ দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণে ২২ গাড়ি ভষ্ম, নিহত ১৩ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে সংসদ নির্বাচনে পোস্টার, ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধ,আচরণ বিধিমালা জারি স্বাস্থ্যের তিনটিসহ একনেকে ১২ প্রকল্প অনুমোদন

২৫ বছরের দণ্ডে দণ্ডিত ইউপিডিএফ সশস্ত্র কমান্ডার মাইকেল চাকমা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৫৮ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে পরিচিত মাইকেল চাকমা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুমন চাকমাকে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার পৃথক পৃথক মামলায় সর্বমোট ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় যুগ ধরে চলা দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে রাঙ্গামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল যৌথভাবে মাইকেল চাকমা ও তার সহযোগী সুমনকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তবে এই সাজা একত্রে কার্যকর হবে নাকি ধারাবাহিকভাবে, তা আদালতের নির্ধারিত দণ্ড কার্যকর নীতিমালার উপর নির্ভরশীল।

জানা যায় ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার ভাইবোনছড়া এলাকায় একটি অভিযানে সেনাবাহিনী মাইকেল ও সুমনকে অস্ত্রসহ আটক করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগে এবং অপরটি অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে।

চাঁদাবাজির মামলায় অভিযোগ ছিল যে, অভিযুক্তরা স্থানীয়দের হুমকি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করতেন। মামলাটি ছিল লংগদু থানায় দায়ের করা ৪ নম্বর মামলা (মামলা নং ৪/২০০৭, SC 36/9)। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত মাইকেল ও সুমন উভয়কেই ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

অন্যদিকে, অস্ত্র ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলাটি ছিল মামলা নম্বর ৫ (GR 330/2007, ট্রাইব্যুনাল কেস নং ২৩২/২০০৮)। এই মামলায় মাইকেল চাকমাকে অবৈধ অস্ত্র বহন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং একই মামলায় চাঁদাবাজি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে আরও সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে দুই মামলায় মোট দণ্ডের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ বছর।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মাইকেল চাকমার বিরুদ্ধে বর্তমানে ১১টি মামলার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেলেও স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে তার বিরুদ্ধে ২০টিরও বেশি মামলায় অভিযোগ রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন, চাঁদাবাজি, এবং সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ।

২০১১ সালে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলায় জোড়া খুনের একটি মামলায় মাইকেল চাকমা প্রধান আসামি ছিলেন। একই বছর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানায় মাদক (ইয়াবা), অবৈধ অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১৮ সালে লংগদুতে রঞ্জন চাকমা হত্যার মামলায় মাইকেল ছিলেন ১৮ নম্বর আসামি। ওই বছরই ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নেতা শক্তিমান চাকমা হত্যাকাণ্ডে তাকে ৩৭ নম্বর আসামি করা হয়। একই বছর বাঘাইছড়িতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের মামলায়, যেমন—সুরেন বিকাশ চাকমা, বন কুসুম চাকমা এবং মিশন চাকমা হত্যার ঘটনায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রায় ঘোষণার পর রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই রায়কে পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ আরও জোরদার হবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

অতীতে মাইকেল চাকমা ‘নিখোঁজ’ থাকার অভিযোগে জাতীয় গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ও মানবাধিকার মহলে বিতর্ক তৈরি হলেও প্রশাসনের দাবি ছিল, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। যার মাধ্যমে তিনি আইনি জটিলতা এড়াতে এবং মানুষের সহানুভূতি পেতে চেয়েছিলেন।

দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড়ে সংঘটিত সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত মাইকেল চাকমার বিরুদ্ধে আদালতের এই রায়কে সংশ্লিষ্ট মহল একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions