কক্সবাজারে এক বছরে জব্দ দেড়শ কেজি আইস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১০ দেখা হয়েছে

কক্সবাজার:- দেশে ইয়াবার পর এখন নতুন উৎপাতের নাম ক্রিস্টাল মেথ–আইস। কক্সবাজার, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও যশোরসহ দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ঢুকছে এই ভয়ংকর মাদক। গত এক বছরে কেবল কক্সবাজার রিজিয়ন বিজিবির অভিযানেই ধরা পড়েছে ১৪০ কেজি আইস। কক্সবাজার জেলায় ভয়ংকর মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথের প্রথম চালান ধরা পড়ে ২০২১ সালের ৩ মার্চ। এদিন টেকনাফের হ্নীলা সীমান্ত থেকে প্রথমবারের মত প্রায় দুই কেজি ‘আইস’ উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর ২০২১ সালে জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে সব মিলিয়ে ২৩ কেজি ৮০২ গ্রাম আইস ধরা পড়ে। আর ২০২২ সালের প্রথম চার মাসেই মিয়ানমার সীমান্ত থেকে পাচারের সময় ৫০ কেজির বেশি আইস উদ্ধার হয়। এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে উখিয়ার পালংখালীর রহমতের রবিল সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে রেকর্ড ২১ কেজি ৯০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস উদ্ধার করেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় তিন পাচারকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পক্ষকাল পার না হতেই ওই বছরের মে মাসে একই এলাকা থেকে ২৪ কেজি ২০০ গ্রাম আইসসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ছিল পুলিশের সাবেক সদস্যও। আর গত একবছরে কক্সবাজারে ধরা পড়েছে অন্তত দেড়শ কেজি আইস। এরমধ্যে কেবল কক্সবাজার রিজিয়ন বিজিবির অভিযানেই ধরা পড়েছে ১৪০ কেজি আইস।

বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আকসার খান জানান, কক্সবাজার বিজিবি গত বছর জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত ১৪০ কেজি আইস জব্দ করেছে। এরপর গত ২ মাসে আরও ১ কেজি আইস জব্দ করা হয়। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ সকল ধরনের মাদকের পাচারের ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক রয়েছে।

বিজিবি ছাড়াও র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে নিয়মিত আইস উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। তবে ২০২১ সালের মার্চে কক্সবাজারে প্রথম আইসের চালান ধরা পড়লেও দেশে প্রথম আইসের চালান ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায়। ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল মোহাম্মদপুর থেকে তিনজনকে মাদকসহ আটকের পর তাদের কাছ ধেকে ৮ গ্রাম আইস পাওয়া যায়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান ও আটককৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকায় একটি ল্যাবের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর একই বছরের গত ২৭ জুন রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ৫২২ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ নাইজেরীয় একজন নাগরিককে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গত আগস্ট মাসেও রাজধানীর আদাবর ও শেখের টেক থেকে ১ কেজি ২০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

তবে গত কয়েক বছরে কক্সবাজারে আইসের সরবরাহ বেড়ে গেলেও ব্যবহার তেমন হচ্ছে না বলে মনে করেন কক্সবাজার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক সৌমেন মণ্ডল। তিনি বলেন, জেলার মাদকাসক্তদের ৯৫ শতাংশই ইয়াবা আসক্ত। আইসের চাহিদা এখনো রাজধানীকেন্দ্রিক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার ও রাজধানীর বাইরে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে গত আগস্ট মাসে ২ কেজি আইস জব্দ করা হয়। এছাড়া গত বছর আগস্টে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্ত তিন কেজি, সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্ত থেকে ১ কেজি, জুনে কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ১ কেজি আইস উদ্ধার হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দেশে ক্রিস্টাল মেথ চোরাচালানের সাথে দেশের কিছুর মাদক ব্যবসায়ীর সাথে মিয়ানমার ও ভারতের কিছু মাদক ব্যবসায়ীর একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেছে। ওরা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অ্যানেসথিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বিধান পাল বলেন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস হল মেথামফেটামিন নামে পরিচিত একটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজক ওষুধ, যেটি খুব বেশি মাত্রায় নেশা উদ্রেককারী দ্রব্য বলে চিকিৎসায় খুব কম ব্যবহৃত হয়। এটি ইয়াবার চেয়ে ৫০/১০০গুন বেশি উত্তেজনা তৈরি করে। তিনি বলেন, ক্রিস্টাল মেথ বা আইস সেবন করলে কারও স্ট্রোক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। মানসিক অবসাদ বা বিষন্নতার কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ঝুঁকি তো আছেই।

ডা. বিধান বলেন, ইয়াবায় এমফিটামিন থাকে পাঁচ ভাগ আর ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের পুরোটাই এমফিটামিন। তাই এটি ইয়াবার চেয়ে অনেকগুণ বেশি ক্ষতিকর মাদক এবং ইয়াবার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে মানবদেহে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মেথামফেটামিন একটি স্নায়ুবিষ, এটি মস্তিষ্কের মধ্য অঞ্চলের স্নায়ুগুলো ধ্বংস করে দেয়। এটি সেরোটনিন স্নায়ুও ধ্বংস করতে পারে।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আনম হেলালউদ্দিন বলেন, একসময় টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢুকত আফিম ও মদ। সেসময় দেশে কোন ইয়াবা সেবনকারী ছিল না। এরপর ২০০৬ সালে শুরু হয় ইয়াবা অনুপ্রবেশ। আর এখন নতুন উৎপাৎ হয়ে ওঠেছে ক্রিস্টাল মেথ। তাই এখনই সতর্ক না হলে ভয়ংকর বিপদ।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions