রাঙ্গামাটি:-বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ-পিসিজেএসএস বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি সূত্র মতে, শুক্রবার ৬ জুন সকালবেলা ইউপিডিএফের একটি সশস্ত্র ঘাঁটিতে জেএসএস-এর পক্ষ থেকে অ্যাম্বুশ চালানো হয়। ভয়াবহ এ বন্দুকযুদ্ধে ইউপিডিএফ-এর সেকশন কমান্ডার রিপেল চাকমা নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে জেএসএস সূত্রের দাবি, রিপেল চাকমা ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থলে নিহত হন। তার নিহত অবস্থার ছবি অনেক অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সচিত্র সংবাদ ছড়িয়ে পড়লেও ইউপিডিএফ-পিসিজেএসএসের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি স্বীকার করেনি। নিহতের ঘটনাটিকে বিবদমান দুই পক্ষই নিজেদের ভাবমূর্তির ব্যাপার মনে করে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার একটি অপপ্রয়াস চালাচ্ছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলপাই রংয়ের পোশাক পরিহিত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়া এক পাহাড়ি যুবকের একটি ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত যুবকের ছবিটি ইউপিএিফ’র সশস্ত্র সদস্যর বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে ঘটনার দিন বিকেলে ইউপিডিএফ মূল দল গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। বিজ্ঞপ্তিতে নিহতের কোনো তথ্য দেয়নি সংগঠনটি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) সদস্যদের ওপর হামলা করতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু) গুলিতে এক শিশু আহত হওয়ার ঘটনা
অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধ করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্দোলনে গড়ে তুলতে জেএসএসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
শুক্রবার (৬ জুন) পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আজ সকালে বাঘাইছড়ির বঙ্গলতলী শুভ রঞ্জন কারবারী পাড়ায় জেএসএস সশস্ত্র দলের সদস্যরা ইউপিডিএফের ওপর হামলা করলে প্রজ্ঞা চাকমা (৫) নামে একটি কন্যা শিশুর পায়ে গুলি লাগে। বিষয়টি অত্যন্ত দুুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
তারা বলেন, জেএসএস সন্তু গ্রুপের ফ্যাসিস্ট নীতির কারণে অনেক নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ নারী-শিশু-বৃদ্ধ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এ সংঘাত বন্ধ না করলে আরও অনেক নিরীহ লোকজনের প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে।
এ সংঘাত কেবলমাত্র তাদেরই লাভবান করে, যারা পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর ওপর চিরকাল শাসন শোষণ জারি রাখতে চায়। যারা ঐক্যের বিরোধিতা করে সংঘাত জিইয়ে রাখতে চায়, তারা কখনোই জনগণের বন্ধু নয়।
ইউপিডিএফ’র সংগঠক ও মুখপাত্র অংগ্যা মারমা বলেন, পিসিজেএসএস’র সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় একটি কন্যা শিশু আহত হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তবে কেউ নিহত হয়নি। আমাদের কেউ নিহত হলে আমরা জানাতাম। লুকোচুরির কিছু নেই বলে জানান তিনি।
বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, গোলাগুলির ঘটনায় এক কন্যা শিশু আহত হয়েছে। আর গোলাগুলির স্থায়িত্ব ছিলো আনুমানিক পনেরো মিনিটের মতো। তবে এখানে কেউ নিহত হয়নি বলে জানান চেয়ারম্যান।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, গোলাগুলিতে দু’জন আহত হওয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের কাছ থেকে জানলেও এক কন্যা শিশু আহত হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম, সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এলাকার আধিপত্যকে বিস্তারকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে দুই আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে শুক্রবার সকালের দিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের দুর্গম উত্তর বঙ্গলতলীর শুভ রঞ্জন কারবারী পাড়া এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে।
এতে একজন নিহত ও এক শিশুসহ ৩ জন আহত হওয়ার কথা শুনা গেলেও নিহতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় ৩জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের দুর্গম উত্তর বঙ্গলতলী শুভ রঞ্জন কারবারী পাড়ায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রণ্টের (ইউপিডিএফ) সদস্যরা অবস্থান করছিল।
এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) দলের সদস্যরা সেখানে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে প্রায় এক ঘন্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে বন্দুক যুদ্ধে একজন নিহত খবর পাওয়া গেলেও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া এ বন্দুক যুদ্ধে প্রজ্ঞা চাকমা নামে পাঁচ বছরের এক শিশু আহতের খবর পাওয়া গেছে।
আহত বাকী দুজনের নাম তাক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। শিশুটির বাম পায়ে গুলি লেগেছে। তার পিতার নাম আয়তন চাকমা। আহত শিশুটিকে কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় এক শিশুসহ ৩ জন আহত হলেও নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে ।
বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুমীর গোপাল দে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় শিশু বা অন্যান্য আহতদের তার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখনো কাউকে নিয়ে আসেনি।
বঙ্গলতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জ্ঞান জ্যোতি চাকমা জানান, এ ঘটনায় এক শিশু আহত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আরো আহত হয়েছে কি না তার জানা নেই।
বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, দুই আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে শুক্রবার সকালের দিকে দুর্গম উত্তর বঙ্গলতলী এলাকায় বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় ৩ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে একটি শিশু সামান্য আহত হয়েছে। বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে।
খবর পেয়ে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। তবে এলাকাটি অতি দুর্গম হওয়ায় আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী পৌছতে দেরী হচ্ছে। সেখান থেকে ফিরে আসলে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।