শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ‘আমি যদি দেখি, যারা পিলখানায় আমার স্বামীসহ সেনা কর্মকর্তাদের পৈশাচিকভাবে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করেছে, তাঁদের লাশ ড্রেনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েছে, আমাদের বাসায় লুটপাট চালিয়েছে, আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের কোয়ার্টার গার্ডে আটকে রেখে চরম নির্যাতন চালিয়েছে, সেই অপরাধীরা কারামুক্ত হয়ে আমাদের চোখের সামনে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে—তাহলে ভাবব এই দেশ আমার না, আমাদের সন্তানদের না, আমাদের সেনা পরিবারগুলোর না।’

এই কথাগুলো ২০০৯ সালে পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে নিহত শহীদ কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসীর।

শহীদ সেনা পরিবার ব্যথিত, আতঙ্কিতকর্নেল মো. মুজিবুল হক সে সময় বিডিআরের ঢাকা সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। নেহরীন ফেরদৌসী গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘মুজিবুল হকের লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ড্রেনে ভেসে সেই লাশ কামরাঙ্গীর চরে চলে যায়। লাশটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাথার খুলি ভাঙা। একাধিক ক্ষত ছিল শরীরে। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে তিনতলা থেকে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্প্রতি অনেক বিডিআর জওয়ান জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যদিও তাঁরা এখনো অভিযোগমুক্ত নন। কিন্তু তাঁদের কারামুক্তি নিয়ে যে ধরনের আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ হয়েছে তাতে আমরা ব্যথিত এবং আতঙ্কিত।
যাঁরা এখনো কারাবন্দি তাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে আন্দোলনের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নানাভাবে হুমকিও আসছে।’

শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের পুত্র সাকিব রহমান বলেন, ‘যাঁরা বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন, জামিন তাঁদের অধিকার হলেও‌‌ তাঁদের এখনো নির্দোষ বলা যাবে না। জামিন মানেই অভিযোগমুক্ত নয়।
তাই তাঁদের পিলখানা ঘটনার ‘ভিকটিম’ হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ডে দুঃখের মিউজিক দিয়ে গণমাধ্যমগুলো যেভাবে তাঁদের জামিনে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি প্রচার করছে,‌ সেটা শহীদদের জন্য অপমানজনক এবং শহীদ পরিবারের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।‌

শহীদ মেজর মো. আব্দুস সালাম খানের সন্তান সাকিব মাহমুদ খান প্রীতমও এ বিষয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি জানান, রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বিডিআরে নিযুক্ত ৫৭ জন নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা, লাশ গুম, তাঁদের বাসায় লুটপাট এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় হতাশ শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা।

প্রীতম বলেন, ‘ওই অপরাধে যাঁরা অভিযুক্ত, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যাঁরা সাজাপ্রাপ্ত, তাঁদের নিরপরাধ দাবি করে মুক্তি চাওয়ার বিষয়টিকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’

গত বুধবারও নিজেদের এই বেদনাদায়ক অনুভূতির কথা জানাতে পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্য এবং সেদিন মৃত্যুপুরি থেকে বেঁচে ফেরা সেনা কর্মকর্তারা রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তাঁরা বলেন, বিডিআর কোর্টের সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের তথা সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিপথগামী জওয়ানদের নিরপরাধ বলার কোনো সুযোগ নেই এবং তাঁদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমাদের একান্ত দাবি, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকরের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বাহিনীটিকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক। সঠিক বিচার না হলে ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পিলখানায় শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুত্ফর রহমান খান এএমসির মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা।

এতে বলা হয়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই, বিডিআর কার্নেজে (গণহত্যা) অভিযুক্ত-সাজাপ্রাপ্ত সৈনিক ও তাঁদের পরিবারকে গত ১৫ বছর কোনো দাবি নিয়ে মাঠে আসতে আমরা দেখিনি, কিন্তু আজ তাঁরা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি নিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের নিরপরাধ দাবির আন্দোলনের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালুর অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই দাবির মাধ্যমে জাতির দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত খুনিদের আড়াল এবং বর্তমান ছাত্র-জনতার সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটি সেনা কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট করারও অপপ্রয়াস। এই খুনিদের যথাযথ বিচার না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, যা মোটেও কাম্য হতে পারে না। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞ। সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কর্তব্যরত নিরস্ত্র-নিরপরাধ ৫৭ জন বিডিআর কর্মকর্তা তথা সেনা কর্মকর্তাকে, তাঁদের লাশ বিকৃত করা হয়, লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রাকে লোড করা হয়, পৈশাচিকভাবে লাশ ক্ষতবিক্ষত করে মাটিচাপা দেওয়া হয়, ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয় এবং গুম করা হয়। কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও নির্যাতন করা হয়। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নিরীহ, নিরপরাধ নারী ও শিশুদের টেনেহিঁচড়ে চরম নির্যাতনের মাধ্যমে ধরে এনে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তাকেই শারীরিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়, কর্মকর্তাদের বাসস্থানে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরি-ডাকাতি করা হয়। কর্মকর্তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসের মাধ্যমে পিলখানাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত ওই অপরাধের চাক্ষুষ সাক্ষী আমরা শহীদ পরিবার ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তারা। সাক্ষী মিডিয়ার ছবি ও ভিডিও, যা সারা পৃথিবী অবলোকন করেছে।’

আরো বলা হয়, ‘সেদিন পিলখানায় প্রায় পাঁচ হাজার বিডিআর সদস্য এবং চার হাজারের মতো অস্ত্র মজুদ ছিল। বিডিআর জওয়ানরা আধাঘণ্টার মধ্য অস্ত্রাগার লুট করে সব অস্ত্র বের করে নেন এবং সরাসরি কার্নেজে ব্যবহার করেন। সেদিন যে শুধু পিলখানায় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে তা নয়, বিপথগামী বিডিআর সৈনিকদের উসকানির মাধ্যমে সারা দেশের রাইফেল ব্যাটালিয়ন ও ট্রেনিং সেন্টারে বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিলখানার সেই হত্যাযজ্ঞ-পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার গঠিত আনিসুজ্জামান তদন্ত কমিশন, সেনাবাহিনী গঠিত সেনা তদন্ত, সিআইডি তদন্ত এবং বিডিআর ইউনিটের তদন্তে রাজনৈতিক কারণে পেছনের ষড়যন্ত্রকারীরা বেরিয়ে আসেনি। তবে তাদের তদন্তে বিপথগামী বিডিআর জওয়ানদের সরাসরি অংশগ্রহণে ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ম্যাসাকার সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ এবং শহীদ পরিবারের সদস্য ও বেঁচে ফেরা কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিভিল কোর্ট ও বিডিআর কোর্টে বিপথগামী জওয়ানদের দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেওয়া হয়। সিভিল আদালতে হত্যা ও অস্ত্র-গোলাবারুদের মামলা পরিচালনা করা হয়। যথাযথ বিধি অনুসরণে এবং অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বিডিআর অর্ডন্যান্সের আওতায় বিডিআর কোর্টে বিদ্রোহের মামলায় জওয়ানদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।’

বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনে দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র জড়িত ছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘জাতি বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কারা ছিল। বিডিআর ম্যাসাকারের পেছনের পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা ও সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি আমরা। প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থানরত দোষী ব্যক্তিদের দেশে এনে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।’

শহীদ সেনা পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবীরা বিডিআর মামলায় সম্পূর্ণ নতুন। এত বড় ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য তাঁদের পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। বর্তমানে চলমান মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে যথাযথ আইনি লড়াই চালু রাখা এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের যথাযথ শাস্তি প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার জন্য শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের অনেকেই পিলখানায় পৈশাচিক সেই হত্যাকাণ্ড এবং তাঁদের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তাঁরা বলেন, ‘আজ যদি আপনি দেখেন খুনিরা আপনার আশপাশেই হেঁটে বেড়াচ্ছে, তখন কেমন লাগবে? আমরা শুধু বলতে চাই, চাইলেই ঢালাওভাবে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’

হঠাৎ যেসব দাবি : অনেকের পর্যবেক্ষণ, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যখন পিলখানায় শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্যরা নিষ্ঠুরতম ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের বিচারের আওতায় আনার সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেন, তখন অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তরাই নিজেদের ‘ভিকটিম’ দাবি করে মাঠে নেমে পড়ে।

গত ৯ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত, অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এই মামলায় সব কারাবন্দির মুক্তি ও মামলা বাতিলেরও দাবি জানান। তাঁরা পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, দেশবিরোধী একটি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বিডিআর সদস্যরা। কারাবন্দিদের মুক্তিসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা। তাঁদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার। তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ে শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা শুরু করে শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।’

গত ১৫ জানুয়ারি রাত ৮টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং সব কারাবন্দির মুক্তির এক দফা দাবিতে পরদিন ‘শাহবাগ ব্লকেড’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘মার্চ টু কোর্ট’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তার আগে দুপুরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘নিরপরাধ’ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রা করেন বিডিআর পরিবারের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তাঁরা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দেন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। ওই দিন তাঁদের পদযাত্রায় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় তীব্র যনজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়। ওই দিনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তের দাবিতে রাতে আমরা শহীদ মিনারে অবস্থা কর্মসূচি পালন করব। যদি ‘ন্যায়বিচার’-এর ইঙ্গিত না দেখি, তাহলে আগামীকাল শাহবাগ ব্লকেড করা হবে।”

এই আন্দোলন ও দাবির পর গত ১৯ জানুুয়ারি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়ায় হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে খালাসপ্রাপ্ত সব আসামিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন দেওয়া হয়। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাঁদের এ জামিন মঞ্জুর করেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর বোরহান উদ্দিন জানান, জামিন পাওয়ার সংখ্যা দুই শতাধিক হবে।

প্রসঙ্গত, পিলখানায় সেই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।

অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৭৫৬ জন কারগারে ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে ১৭৮ জনের জামিনে মুক্তির পর বর্তমানে আরো ৫৭৮ জন কারাগারে আছেন।

পিলখানায় সেই সময় বিডিআর সদস্যদের অপরাধ সম্পর্কে সাবেক সচিব আনিস-উজ-জামানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, ‘তারা শুধু সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা অস্ত্রাগার লুট করে, ১৬টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ১৮টি গাড়ি ভাঙচুর করে. বাড়িঘর লুটপাট, তছনছ করাসহ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজনের ওপর অমানবিক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালায়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ এবং জীবিত অফিসার ও তাঁদের পরিবার-পরিজনকে জিম্মি করে কার্যত দেশকে এক বিভীষিকাময় ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।’কালের কণ্ঠ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions