ডেস্ক রির্পোট:- গত ১৬ বছরে সামরিক বাহিনীর ওপর হওয়া অন্যায় ও অবিচারের ন্যায্য বিচার পেতে স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এটি করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা। সম্প্রতি সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই সংস্কার প্রস্তাবনা জমা দেন।
প্রস্তাবনায় পুরনো সামরিক আইন ও বিধি বাতিল করে নতুন আইন প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সামরিক সদস্যদের ন্যায়বিচারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করারও কথা বলেছে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারা। সামরিক বিচারব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে- সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ন্যায্য অধিকার এবং তাদের পেশাগত জীবনকে সম্মানিত করা ও বিদ্যমান আইন সংস্কার করে নতুন আইন প্রবর্তন করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন অত্যন্ত জরুরি। এই কমিশন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, মানবাধিকার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং স্বশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। তারা জানান, আমরা দৃঢ়ভাবে প্রস্তাব করছি যে, একটি স্বাধীন সামরিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হোক যা ভবিষ্যতে স্বশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যের ন্যায্য অধিকার রক্ষা করবে এবং শাস্তি, পদোন্নতি, রাজনীতি করণসহ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে সামরিক সদস্যদের মধ্যে যে কোনো ধরনের অবিচার রোধ করবে।
এ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির বলেন, আশা করি খুব শিগগিরই আমাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর মন্ত্রণালয় থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা প্রস্তাবনার কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চান এবং সংশোধন করেন। পরে আশ্বাস দেন এ নিয়ে সংস্কার কমিশন গঠনের। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠাবে বলে জানানো হয়েছে। তার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হাসান নাসির বলেন, গত ১৬ বছরে স্বশস্ত্র বাহিনীর ওপর যা হয়েছে তা কমিশন গঠন করেই সমাধান করতে হবে। কোনো ধরনের ছোটখাটো কমিটি করে কাজ হবে না। আমরা যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছি সেটা কোনো কমিটির পক্ষে কিংবা কোনো বাহিনীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। সামরিক আইন পরিবর্তনের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে সামরিক আইন আছে সেটা ব্রিটিশ আমলের। ব্রিটিশ আমলের আইনটা পাকিস্তান, ভারত নিয়েছে। পরে পাকিস্তান থেকে আমরা নিয়েছি। গত ১৬ বছরে এই সেনা আইনের চরম অপব্যবহার হয়েছে। এ জন্যই আমরা এর পরিবর্তন চাচ্ছি। এমন আইন করতে হবে যেটার অপব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। আমরা সবাই অন্যদের হিউম্যান রাইটস নিয়ে কথা বলি। কিন্তু সেনাবাহিনীর হিউম্যান রাইটস নিয়ে কোনো কথা বলি না।
লিখিত প্রস্তাবে সামরিক কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘকাল ধরে গুরুতর অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে আসছেন। এই অবিচারের কারণে তাদের পেশাগত জীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বহু সামরিক কর্মকর্তা ও সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রমের শিকার হয়েছেন। অযৌক্তিকভাবে তাদের বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর এবং আর্থিক বা সামাজিক হয়রানি করা হয়েছে। এসবের মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- বর্তমানে পুরনো সামরিক আইন ব্যবহৃত হচ্ছে যা আধুনিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধানের ৪৫ অনুচ্ছেদ সামরিক সদস্যদের ন্যায়বিচারের সুযোগকে সীমিত করেছে এবং সামরিক বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। প্রস্তাবনায় পাঁচটি দাবি জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ২০০৯ সাল থেকে সব বিতর্কিত বরখাস্ত এবং কোর্ট মার্শাল পর্যালোচনা করা। যারা অবিচারপূর্ণভাবে পদচ্যুত হয়েছেন, তাদের পদোন্নতিসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা। যাদের অবিচারে বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের পুনর্বহাল করা। পুনর্বহালকৃত কর্মকর্তাদের সরকারি বা সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়া। অবিচারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলাদেশ প্রতিদিন