শিরোনাম
পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,প্রথম খসড়া তালিকায় নিহত ৮৫৮ জন, আহত সাড়ে ১১ হাজার আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা, বিএনপি কোন পথে সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না, যন্ত্রগুলো কী করবে ইসি মঞ্চ প্রস্তুত আরেকটি এক-এগারোর? আসছে হাসিনা আমলের চেয়ে বড় বাজেট,আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি,দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি! বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, জয়া আহসান ও ফাহিম আহমেদ

যে আইনে হবে শেখ হাসিনার বিচার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩২ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচারে করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩। সে আইনে অপরাধীদের বিচারও চলে আসছিল।

কিন্তু ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সে আইন নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনা হয় আইনে। শুধু আইনেই নয়, মেরামত করে দৃষ্টিনন্দন তথা ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনকে।

সংশোধিত আইনে বিচার হবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অপরাধে অভিযুক্তদের। যেখানে রয়েছে, ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তার মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, ১৪ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সাবেক সচিব, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

এদের বিচারে সংশোধিত অধ্যাদেশে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো গুমের অভিযোগও বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তবে যুক্ত করা হয়নি দলের বিচারের কথা।

গত ২৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ করা হয়েছে।

পরদিন এ বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, আইনটি সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। আইনে যেসব দুর্বলতা ছিল ও আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রশ্নগুলো আইনটি সম্পর্কে তোলা হতো, সেসবের সমাধান করে এই সংশোধনী আনা হয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, ডিফেন্সকে প্রস্তুত করার জন্য আগে আসামিদের তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হতো, এখন তা বাড়িয়ে ছয় সপ্তাহ করা হয়েছে। আগে প্রসিকিউশন সীমিত নথিপত্র ডিফেন্সকে দিতে পারত, এখন যেকোনো নথিপত্র আদালতের কাছে চাইলে পাবে।

তিনি আরও জানান, অভিযোগের শুনানির সময় ডিফেন্সকে (আসামিপক্ষ) তার সব সাক্ষীর নাম বা তালিকা দিতে হতো। এখন বিচারের যেকোনো সময় সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে পারবে ডিফেন্স।

আগে সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্যের (মেম্বার অব আর্মড ফোর্স) বিরুদ্ধে ওই আইনে বিচার করা যেত। এখন এর পরিবর্তে মেম্বার অব ডিসিপ্লিনারি ফোর্স বা তিন বাহিনীর সঙ্গে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা ও আনসার বাহিনীকেও এ আইনে বিচার করা যাবে।

দলের বিচার নিয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন জানান, এ আইনে রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে বিচারের আওতায় আনতে কোনো বিধান রাখা হয়নি। কারণ, এর জন্য অন্যান্য আইন আছে।

আরেক প্রসিকিউটর শাইখ মাহদী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের নতুন সংশোধনীতে উল্ল্যেখযোগ্য পরিবর্তনগুলো তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো—
(১) আইন অনুসারে অপরাধের এখতিয়ারের ভৌগলিক ক্ষেত্র ছিল শুধু বাংলাদেশে, এখন এর এখতিয়ার বাংলাদেশসহ বাংলাদেশের বাইরেও বিস্তৃত করা হয়েছে। অর্থাৎ, দেশের বাইরে থেকেও যদি কোনো ব্যক্তি আইনে সংজ্ঞায়িত কোনো অপরাধ করেন, সেক্ষেত্রে তার বিচারও এখানে হওয়া সম্ভব।

(২) আইনে ইতিপূর্বে ‘বাহিনী’ বলতে শুধু সামরিক বাহিনীকে বোঝালেও নতুন রূপে ডিসিপ্লিনড ফোর্স হিসেবে বাহিনীগুলোকে আনা হয়েছে, যেখানে সামরিক তিন বাহিনী ছাড়াও এর সাথে সাথে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড এবং আনসারসহ আইনের দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোনো বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত হবে। এর পাশাপাশি, গোয়েন্দা সংস্থার দায় আনা হয়েছে, অর্থাৎ কোনো গোয়েন্দা সংস্থা যদি অপরাধের সাথে যুক্ত থাকে সেক্ষেত্রে তাদেরও বিচার করা যাবে।

(৩) অপরাধের সংজ্ঞায় (ধারা ৩)-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞাটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডের মতো করে, বিশেষত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)-এর সংজ্ঞা এবং ব্যাখ্যার আলোকে সাজানো হয়েছে, এবং অপরাধ হিসেবে বিদ্যমান অপরাধের সাথে সাথে এনফোর্সড ডিজ্যাপিয়ারেন্স (গুম), মানব পাচার, যৌন নির্যাতন, যৌন দাসত্ব এগুলো যুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে, অপরাধের জন্য দায়বদ্ধতার ধারাটি (ধারা ৪) আরও বিস্তৃত করা হয়েছে।

(৪) নতুন সংশোধনীর আলোকে, আদালত চাইলে বিচারিক প্রক্রিয়ার অডিও-ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন এবং প্রয়োজন মনে করলে তা অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের নির্দেশনাও দিতে পারবেন। জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিরা বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে ভার্চ্যুয়াল শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের সুযোগও থাকবে। বার কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবীরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

(৫) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হচ্ছে, যদি এই আদালতে কোনো অভিযোগ আসার পর দেখা যায় যে, এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ বা গণহত্যার অভিযোগ নয়, সেক্ষেত্রে সেই মামলা যথাযথ আদালতে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।

(৬) নতুন সংশোধনীতে আসামির অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আনা হয়েছে। আসামিপক্ষ প্রসিকিউশনের কাছ থেকে বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ডকুমেন্ট পাওয়ার অধিকারী হবে (ম্যান্ডেটরি ডিসক্লোজার)। এ ছাড়া আসামিপক্ষ তাদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুবিধা পাবেন এবং গ্রেপ্তারকালীন অবস্থায় কোনো ধরনের নির্যাতন (কাস্টোডিয়াল টর্চার) থেকে আইনানুগ সুরক্ষা পাবেন।

(৭) এই আইনের সবচেয়ে বেশি সমালোচিত সাক্ষ্য সংক্রান্ত পুরনো বিধানটি (ধারা ১৯ এর ১) বাতিল করে নতুন বিধান আনা হয়েছে, যেখানে সিসি ক্যামেরা, ড্রোন ফুটেজ, মোবাইল ফোনের ডেটা ইত্যাদি সর্বাধুনিক ডিজিটাল সাক্ষ্যসহ কোন কোন বিষয় বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য হিসেবে আনা যাবে—তার সুস্পষ্ট এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতা চ্যালেঞ্জ করার বিধান রাখা হয়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল যদি কোনো সাক্ষ্যকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করে, সেক্ষেত্রে সেটি আর বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বিধান লঙ্ঘন করে সংগৃহীত কোনো সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে না, বিশেষত যদি এই ধরনের সাক্ষ্য বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

(৮) নতুন সংশোধনীতে ভিকটিমদের জন্য ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হয়েছে। এই ক্ষতিপূরণ অপরাধী (দণ্ডিত) ব্যক্তি নিজে দেবেন বা তাদের সম্পদ থেকে আদায় করা হবে বা রাষ্ট্র বহন করবে। এছাড়া ভিকটিম এবং সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিতে পারবেন। আর ট্রাইব্যুনালের আদেশ অমান্য করা হলে যদি আদালত অবমাননার দায়ে কারো বিরুদ্ধে কোনো আদেশ হয়, এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অন্তর্বর্তীকালীন আপিল করা যাবে। তবে আপিল বিভাগে আবেদন পেন্ডিং থাকলে ট্রাইব্যুনাল মামলা চালিয়ে যেতে পারবেন যেন কোনো ধরনের অযাচিত বিলম্ব না হয়।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions