ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের তথ্য নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন। শুক্রবার রাতে ‘পুলিশ, আনসারের সমম্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র গেরিলা আক্রমনের পরিকল্পনা’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতেই তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
প্রতিবেদনে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড.আই খান পান্নার নেতৃত্বে সরকার উৎখাতে কিভাবে সশস্ত্র গেরিলা হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে-এমন কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হয়।
এরআগে গত ২১ নভেম্বর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা গণহত্যার মূলহোতা ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এ ছাড়া ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত আহাদুল ইসলামকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর দায়ের হওয়া একটি মামলায় জেড আই খান পান্না ছিলেন আসামি। ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ তাকে আগাম জামিন দিয়ে দেন। আহাদুলের পিতা মো: বাকের বাদী হয়ে এ মামলা করেছিলেন। ২১ অক্টোবর এজাহার থেকে বাদ দেয়া হয় পান্নার নাম।
পাঠকদের জন্য প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের প্রতিবেদনটির শেষ সাত মিনিটের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হুবহু তুলে ধরা হল।
ভিডিওতে সাংবাদিক ইলিয়াস বলেন, দেশের জন্য বিপজ্জনক কতটা সেটা জানতে চলুন, শুরুতেই যে প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের কথা বলেছিলাম সেখানে ফিরে যাওয়া যাক। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পাঁচ তারিখের (৫ আগস্ট) পর থেকে দেশে নানাভাবে একটা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেটাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে একটা সামরিক অভিযান চালানো যায়।
এই দাঙ্গা বাঁধাতে ভারতীয় গোয়েন্দারা আওয়ামী লীগ, হিন্দু এবং ইসকনকে কিভাবে ব্যবহার করছে সেই পরিকল্পনার ছক এখন বাংলাদেশী গোয়েন্দাদের হাতে।
ইলিয়াস হোসাইন বলেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে যেসব তথ্য আমার কাছে পৌঁছেছে তা রীতিমত এই দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। শুরুতেই আওয়ামী লীগ, হিন্দু আর ভারতের এই চক্রান্ত যদি সঠিকভাবে মোকাবেলা করা না যায় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের অবস্থা হবে হায়দ্রাবাদের মতো।
এই চক্রান্তে জড়িত আওয়ামী লীগ, সনাতনী এবং ইসকনের অন্তত: ৪০টি হোয়াটসআপ গ্রুপ এবং জুম মিটিং এর ভিডিও হাতে পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এসব তথ্যে যা উঠে এসেছে তা আঁতকে ওঠার মতো!
ইলিয়াস বলেন, এসব গ্রুপগুলোতে রীতিমত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। গ্রুপে তাদের সাথে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে বর্তমান সেনাবাহিনীতে চাকরিরত জেনারেল পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই নাকি যোগ দিচ্ছেন বলে দাবি করেন ইলিয়াস হোসাইন।
ভিডিওর একপর্যায়ে বলতে শোনা যায়, ‘নানক ভাই থেকে শুরু করে আমাদের সুজিত তারপর আরো অনেক টপ লেভেলের যারা মন্ত্রী মিনিস্টার প্রতিমন্ত্রী তারপরে ইভেন কামাল ভাই আমাদের সাথে যুক্ত আছেন। বিশেষভাবে ইভেন রাষ্ট্রপতির একেবারেই যে একেবারে মানে রাইট হ্যান্ড সচিব উনিও আমাদের সাথে দুইদিন জয়েন করছেন। তো এখন উনারা আসলে ভালো হইতো। যারা যারা আছেন আসলে ভালো হইতো, অনেকেই আমাদের এখানে প্রায় ১২ থেকে ১৩ জন এমপি এসে কথা বলেছেন যেটা আপনারা জানেন না ঠিক আছে! বাংলাদেশের একেবারেই টপ লেভেল সামরিক বাহিনীর চার থেকে পাঁচজন জেনারেল লেভেলের লোকজন উনারা এসে এখানে বসে থেকে আমাদের লাইভ শুনে গেছেন! আমাদের প্রধানমন্ত্রী উনি নিজে এসে বসে থেকে গেছেন।’
এরপর ইলিয়াস হোসাইন আরো বলেন, গ্রুপের সবচেযে ভয়ঙ্কর তথ্য পাওয়া গেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্নার মেসেজ থেকে আওয়ামী এই আইনজীবী শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকা- নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন জেড আই খান পান্না। একটি চ্যাটিংয়ে তিনি লিখেছেন, ‘দাঁড়িওয়ালা উকিল বেশি হয়ে গিয়েছে, আরো দু-একটারে খেয়ে দেয়া দরকার। আদালতে আমরা আছি, এখন অল্প কয়দিন জেলে থাকলেও ৩০ তারিখের পরে পুরস্কার পাবা।
আরেকটি মেসেজে তিনি লিখেছেন, ‘সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে তোমাদের কারণে। কালকে সব হয়ে যেত । পরিকল্পনা ছিল কুপিয়ে মারার পর হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হলে ভারত থেকে ট্রুপ চলে আসবে, ওরা যেহেতু হামলা করেনি তোমাদেরই উচিৎ ছিল নিজেরা নিজেদের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া। পেছনের ঘটনা বাদ দিয়ে ৩০ তারিখের পরিকল্পনায় মনোযোগী হও সবাই।
ভিডিওতে ইলিয়াস হোসাইন আরো বলেন, ‘শহীদ আলিফ হত্যাকা- নিয়ে আরেকজন লিখেছেন, ‘কালকে আদালতে একটা লাশ পড়বে। হিন্দু ভাইদের পাশে আমাদের সবাইকে থাকতে হবে। ব্রিগেড মেজরের কমান্ড মেনে চলতে হবে। ৩০ তারিখে কর্মসূচি নিয়ে গ্রুপটিতে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ দখলের ভয়ঙ্কর সব আলোচনা করার ভিডিও হাতে এসেছে আমাদের।’
এসময় আরেকটি অডিও রেকর্ডিংয়ে একজনকে বলতে শোনা যায়. ‘৫ হাজার অস্ত্র আছে, একে-৪৭ রাইফেল আছে। পুলিশ ও লীগের ক্যাডার মিলিয়ে ১৭শ’ গেরিলা প্রস্তুত করা হয়েছে ৩০ নভেম্বরের জন্য। আমরা ইতিমধ্যে কথা বলেছি পুলিশের সাথে, উত্তরা আশুলিয়া থেকে শুরু করে ঢাকা শহর ব্লক করে দখলে নেয়া হবে…’।
এসময় সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন আরো বলেন, এই কাজ সমর্থনে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য পুরো দেশকে মোট দশটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একজন করে ব্রিগেড মেজর নিয়োগ দেয়া হয়েছে যাদের সবাই দেশেই অবস্থান করছেন। এর মধ্যে গ্রুপে প্রাপ্ত জেড.আই খান পান্নার নম্বরটিতে মেসেজ পাঠানো হলে মুহূর্তেই সাড়া দেন তিন্ িকল করতেই গড় গড় করে সবকিছু স্বীকার করেন জেড আই খান পান্না। ৩০ তারিখ ৫০ থেকে ৮০ ভাগ পুলিশ-আনসার এমনকি সচিবালয়ের আমলারাও তাদের পক্ষে মাঠে নামবে বলে স্বীকার করেন গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনাকারী জেড আই খান পান্না।
সাংবাদিক ইলিয়াস বলেন, পালিয়ে যাবার আগে এই ভিডিও প্রচারের সাথে সাথে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে ( জেড আই খান পান্না) গ্রেফতার করতে হবে। তাহলে চক্রান্তকারীদের আরো পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যেতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরণের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে গ্রুপে থাকা সকলের মোবাইল নম্বর এবং চেহারা দেখে শনাক্তের পর দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
ইলিয়াস বলেন, ‘সূত্র জানিয়েছে …. প্রধানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে,
এসব দেশবিরোধী তৎপরতা! আর্মিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হলেও তাদেরকে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেয়া হচ্ছে না। যে কারণে আওয়ামী লীগ নেতারা বেশিরভাগ এখনো দেশে থাকলেও তাদেরকে ধরা হচ্ছে না। অতএব সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ হাসিনাপন্থী অফিসারদেরকে দ্রুত সেনাবাহিনী থেকে সরাতে হবে। পাঁচ তারিখ সেনাপ্রধান যে ভূমিকা রেখেছেন তার জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ’
ইলিয়াস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে সেনাবাহিনী আমাদের আস্থার প্রতীক, সিনিয়র অফিসারদের দেশবিরোধী আদেশ এলে সৈনিকদেরকে নিযে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। মনে রাখতে হবে আপনাদের মত দেশপ্রেমিকদের সংখ্যাই এখনো সেনাবাহিনীতে বেশি। দেশের যে কোন সেনাবাহিনী যদি জনগণকে ডাক দেয় তাহলে এদেশের প্রতিটি মানুষ জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’
সাংবাদিক ইলিয়াস আরো বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশে থাকা ভারতীয় গুপ্তচরকে ……দ্রুত সরাতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছাত্রনেতাদের সাক্ষাতের পথ সহজ করতে হবে।’ প্রভাবশালী একজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে মাহফুজ আলমকে তার পাশ থেকে সরিয়েছেন অতএব যত দ্রুত সম্ভব মাহফুজ আলমকে আবারো বিশেষ সহকারীর পদে ফিরিয়ে আনতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নাহিদ এবং আসিফদের মতামতপ প্রধান উপদেষ্টাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। জেড আই খান পান্নাদের ষড়যন্ত্র এবার সফল না হলেও এই ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে শত্রু আপনাদের ঘরের কোণেই।’
তিনি বলেন ‘ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করে তাহলে সবার আগে আওয়ামী লীগ আর শ্রীকৃষ্ণের ভক্তরাই আপনার গলায় ছুরি ধরবে। অতএব শত্রুরা যেন আবারো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভারতের কাছে বিক্রি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে আল্লাহ হাফেজ।
উপরোক্ত বক্তব্য প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের একান্ত ব্যক্তিগত মতামত ও তথ্যের ভিত্তিতে তার ইউটিউব চ্যানেল হতে সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে দেনিক ইনকিলাবের কোন দায়িত্ব বা দায়ভার নাই।