শিরোনাম
রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকে আওয়ামীপন্থীদের অপসারণ করে জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি রাঙ্গামাটির লংগদুতে জেলা পরিষদের সদস্য মিনহাজ মুরশীদ ও হাবীবকে সংবর্ধনা রাঙ্গামাটিতে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা: ৬৭৬ রোগীর চিকিৎসা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে তীব্র ক্ষোভ জনমনে: বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি আওয়ামী লীগ পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির জন্য দায়ী : ওয়াদুদ ভূইয়া রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে মোটরসাইকেল-চোলাইমদসহ গ্রেপ্তার ৩ বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএফের তিন সদস্য নিহত বাণিজ্য সম্ভাবনায় ‘সেভেন সিস্টার্স’ দুবাইয়ে বিপু-কাজলের ২০০ কোটির দুই ভিলা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘুষের সিন্ডিকেট,বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে দেনদরবারেও জড়িত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে অবাধে ঘুষের টাকা নিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পাঁচ কর্মকর্তার সিন্ডিকেট। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিসহ নানা ক্ষেত্রে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের কাছে জিম্মি ছিল পুরো মন্ত্রণালয়। পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে আদায় করা হতো মাসোহারার টাকা।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতির আমলযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা হলেন– মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস (রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে কর্মরত), জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু (বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত), সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন ও গ্রেপ্তার হওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন।

তারা ওই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় যখন যা খুশি তাই করতেন। তাদের ইশারায় চলত মন্ত্রণালয়। তাদের অবাধ্য হলেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পর্যন্ত চেয়ার নড়ে যেত। গত ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর ওইসব কর্মকর্তার কেউই এখন স্বরাষ্ট্রে নেই। ভেঙে গেছে সিন্ডিকেট।

পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তাদের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এর মধ্যে গত ৯ অক্টোবর সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছে। বাকি চারজনের বিরুদ্ধে শিগগির মামলা করা হবে।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, পুলিশের ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলামের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে তাঁকে গাজীপুর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সে সময় ঘটনাটি আলোড়ন জাগিয়েছিল। দুদক এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। বর্তমানে তিনি ওএসডি অবস্থায় রয়েছেন।

ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস বেশ আগে অবসরে গেলেও তিনি সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে একজন প্রভাবশালীর কালেক্টর হিসেবে কাজ করতেন। এক সময় তাঁর পিএসের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তিনি তদবির করে দফায় দফায় পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ পদ লাভ করেছিলেন। তারও আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর পিএস ছিলেন।

সিন্ডিকেটের সদস্যরা পুলিশে নিয়োগ, বদলি, মামলা রেকর্ড, চার্জশিট থেকে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকার ঘুষ আদায় করতেন। পুলিশ, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ছিল টাকার ভান্ডার। মাসোহারা আসত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সিন্ডিকেট ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে প্রভাবশালী একজনকে লাভবান হতে সহায়তা করেছে এবং নিজেরা লাভবান হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের প্রধান ব্যক্তি হারুন অর রশীদ ঘুষের টাকা আদায়ে মূল ভূমিকা রাখতেন। একপর্যায়ে তিনি অবসরে গেলেও মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন মন্ত্রণালয়ে। প্রভাবশালী একজন ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচারও করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া এসপিদের পদায়ন সম্ভব ছিল না। তাদের ঘুষ-দুর্নীতি লাগামহীন হলে সিন্ডিকেটের খবরটি নিয়ে সচিবালয়ে এক সময়ে তোলপাড় হয়। গত ২০২২ সালের ৩০ জুনে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলামকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের এক মাস আগে হারুন অর রশীদের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছিল। গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বসে হারুন অর রশীদের হাতে নগদ আরও ২ কোটি টাকা তুলে দিয়েছিলেন মোল্ল্যা নজরুল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে চাঁদাবাজি করার কারণে বিতর্কিত হয়েছিলেন মোল্লা নজরুল।

এ নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপির কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় জনগণ। ওই ঘটনায় তাঁকে অপসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হলে এক শীর্ষ ব্যক্তি তাতে বাধা দিয়েছিলেন। বিষয়টি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তাঁকে অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই পরিস্থিতিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় প্রায় দেড়শ কাউন্সিলর প্রার্থীকে জিম্মি করে প্রতিজনের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন এনজিওর নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) দিতে প্রতি সংস্থার কাছ থেকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা সেলামি দিতে হতো।
ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেই স্বরাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালীর দপ্তর থেকে ওই প্রতিষ্ঠানে একটি তালিকা পাঠানো হতো। তালিকা মোতাবেক তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করা হতো। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগের শুরুতেই প্রভাবশালীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। তালিকার সবাইকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছিল অধিদপ্তর। নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮-১২ লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসাদুজ্জামান খান কামালের সময় পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করে সাবেক এপিএস মনির হোসেন তাঁর কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার একটি চেক নিয়েছিলেন। পরে ওই চেকটি হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে দেওয়া হয়েছিল। তবে ওই কর্মকর্তাকে কোনো জেলায় পদায়ন করা হয়নি। পরে চেকটি ফেরত দেওয়া হয়। বঞ্চিত আরও একজন এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ৬০ লাখ টাকার চেক দিয়েছিলেন মনিরের কাছে। তাঁর সঙ্গে চুক্তি হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার। কিন্তু পদায়নের আগে আরও ৬০ লাখ টাকার চেক না দেওয়ায় তাঁকে পদায়ন করা হয়নি। সমকাল

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions