চট্টগ্রাম:- চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ জাহাজে রহস্যজনকভাবে আগুন লেগেছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও এই ঘটনায় একজন নাবিকের মৃত্যু হয়েছে। চার দিনের ব্যবধানে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এই জাহাজে আগুনকে নাশকতা হিসেবে দেখছেন কর্তৃপক্ষ। এর আগে একই এলাকায় গত সোমবার ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ জাহাজে বিস্ফোরণের পর আগুনের ঘটনায় তিনজন মারা যান।
শুক্রবার মধ্যরাত পৌনে একটায় জ্বলতে শুরু করে ‘এমটি বাংলার সৌরভ’। বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত বিএসসি’র এ অয়েল ট্যাংকারের আগুন নিয়ন্ত্রণে ও উদ্ধার অভিযানে কোস্টগার্ড টাগ শিপ বিসিজিটি প্রমত্ত, মেটাল শার্ক ৩টি ও ৪টি টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ শুরু করে। রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় পানিতে ডুবে সাদেক মিয়া (৫৯) নামে জাহাজের এক ক্রুর মৃত্যু হয়। সাদেকের বাড়ি নোয়াখালী। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের পর নাবিকরা বঙ্গোপসাগরে লাফ দেয়। এরপর ৪৮ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে সাদেক মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিনার্স এসোসিয়েশনের একাধিক সূত্র জানায়, একটি জাহাজের আয়ুষ্কাল থাকে ২০ থেকে ২৫ বছর। এরপর তা আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভ নামের ট্যাংকার দুইটি ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল ডেনমার্কে। ট্যাংকার দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে পতেঙ্গার বিভিন্ন ডিপোতে নিয়ে আসে। কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. শাকিব মেহবুব জানান, রাত ২টা ৩৫ মিনিটে কোস্টগার্ড টাগ শিপ বিসিজিটি প্রমত্ত এমটি বাংলার সৌরভের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এসময় কোস্টগার্ড জাহাজে থাকা মোট ৫০ জন ক্রু’র মধ্যে ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বাকি একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
জানা যায়, কোনো ধরনের বিস্ফোরণ ছাড়াই জাহাজের চার স্থানে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আবার আগুন লাগার সময় জাহাজের পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোটও চলে যেতে দেখা যায়। সব মিলিয়ে এমটি ‘বাংলার সৌরভ’ জাহাজে অগ্নিকাণ্ড প্রাথমিকভাবে নাশকতা বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রকৃত কারণ তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, যেহেতু গ্যাস ফর্ম কিংবা অন্য কোনো কারণে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। তাই আমরা ধারণা করছি, এটি নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। কিন্তু সবকিছু তদন্তের পরেই জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলার সৌরভ জাহাজের সম্মুখ অংশ থেকে একসঙ্গে চার স্থানে আগুন লাগে। অথচ জাহাজে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি। যখন জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে ঠিক এসময়ে পাশ দিয়ে একটি স্পিডবোটও যায়। কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, দুর্ঘটনার পর নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন্দরের টাগবোট দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে ৪৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ট্যাংকারের যেখানে জ্বালানি তেল রয়েছে, সেখানে আগুন লাগেনি। এখন ট্যাংকারটি থেকে জ্বালানি তেল স্থানান্তর করে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।