কারাগারে ডিভিশন পাচ্ছেন ৪৩ ভিআইপি, থাকছেন যে সুবিধায়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৯১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোট ৩৭ জন এমপি, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাপুটে কর্মকর্তারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারের বাসিন্দা। বন্দিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৪৩ জন ভিআইপি পাচ্ছেন কারাগারের ভিডিশন সুবিধা।

কারা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে আবেদন মঞ্জুরের পর সরকারের নির্দেশে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে সারাদেশে কারাগারে রয়েছেন ৪৩ জন ভিআইপি। তাদের মধ্যে ১০ জন জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন। কারাগারে ডিভিশন মানে আলাদা একটি নির্ধারিত ভবনে থাকার সুযোগ পাওয়া। সাধারণ বন্দিদের তুলনায় ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের খাবারের তালিকায় দু-একটি আলাদা আইটেম থাকে।

এছাড়া ৫ আগস্টের আগে গ্রেফতার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির পাচ্ছেন ডিভিশন সুবিধা।

সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীসহ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যকে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

কারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে শ্রেণি (ডিভিশন) সুবিধা পান সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যে কোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পান।

নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাবেক এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করলে অথবা এ বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা করা হয়। যাদের বিষয়ে আদালত বলবেন না তারা যদি আবেদন করেন তখন সে আবেদনটি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন

ডিভিশনে যে সুবিধা মেলে
জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কেউ কেউ ডিভিশন পান। তিন শ্রেণির ডিভিশন দেওয়া হয়। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ এবং ডিভিশন-৩।

যারা ডিভিশন পান তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে থাকে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন। এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বন্দির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বইপত্র এবং দু-তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাবারের মানও ভালো থাকে।

কারা সূত্র জানায়, তিনবেলা নিয়মমাফিক খাবার দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। ডিভিশন যারা পেয়েছেন তারা নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করেছেন। তবে বাড়তি কোনো খাবার খাওয়া বা কারাগারের ভেতরের মাঠেও ঘোরাফেরা করার সুযোগ নেই। যে ভবনটি তাদের জন্য নির্ধারিত সেখানেই তারা ঘোরাফেরা করছেন। একে অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন। নিজেদের ভুলের প্রায়শ্চিত্তের গল্প বলছেন একে অন্যের কাছে।

আরেকটি কারা সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে দেশের শীর্ষ ধনী সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বর্তমানে কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। এমনকি আত্মীয়-স্বজনরাও তেমন দেখা করতে আসছেন না। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিন পরপর স্বজনদের দেখা মেলে। বাইরের খাবার নেওয়ার নিয়ম না থাকায় কারাগারের খাবারই জুটছে তাদের ভাগ্যে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions